মানুষের জন্যই মানুষ। সংকটে ও বিপদে মানুষই ছুটে এসে সাহায্য করবে এই প্রত্যাশায় স্বাভাবিক, তা না হলে মানব জন্ম অনেকটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। সমাজে এমন অনেকেই আছেন, যারা অন্যের বিপদ-আপদে চুপ করে বসে থাকতে পারেন না। কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে, কেউবা সম্মিলিতভাবে, কেউবা কোন ব্যানারে কাজ করে চলেছেন অসহায় মানুষের সেবায় বা সমাজ এবং দেশের মঙ্গলের জন্য।
এমনই একটি উদাহরণ, যারা নিঃস্বার্থভাবে, কোন যশ-খ্যাতি বা প্রাপ্তির আশায় নয়, কেবলই নিজের বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে মানব সেবায় নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন যশোর জেলায় জন্মগ্রহণকারী এবং বর্তমানে ঢাকার রামপুরা বনশ্রীতে বসবাসকারী এক দম্পতি। যারা তাদের বেতনের টাকা থেকে সংসারের খরচ কমিয়ে এবং নিকট আত্মীয় স্বজন ও কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষের সহায়তায় নীরবে-নিভৃতে দরিদ্র অসহায়দের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের দরিদ্র মানুষ যখন করোনা আতংকে কর্মহীন হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপনে হিমশিম খাচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তেও তাদের পাশে দাঁড়ালেন এই দম্পতি। তাঁরা হলেন, একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত কাজী আনিসুজ্জামান আরজু এবং তার স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা সৈয়দা মিতা মোনালিসা। মধ্য আয়ের এই দম্পতি নিজেদের তিন সন্তানসহ ৬ জনের সংসারের মাসিক খরচ বাদে বাকি অর্থ দিয়ে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো তাদের আনন্দ বলে জানান।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে খিলগাঁও ভুঁইয়াপাড়া মেরাদিয়ায় ১শ’ টি পরিবারের মধ্যে একাধিক বার খাবার চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আলু, লবণ, মাস্ক এবং সাবান দিয়ে সহায়তা করেন। সমাজ সেবক কাজী আনিসুজ্জামান আরজু বলেন, দেশের এই দুর্দিনে আমার সামর্থের মধ্যে যতটুকু সম্ভব দরিদ্র মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। বিত্তবানদের ও নিজ নিজ এলাকার হত দরিদ্রদের পাশে থাকা উচিৎ। ত্রাণ দেওয়ার সময় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে না করে প্রকৃত অবস্থায় মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করেন। উল্লেখ্য, এই দম্পত্তি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, এলাকায় ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা, সেলাই মেশিন প্রদান, হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান, অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম করছেন তাদের এই কার্যক্রমকে আরো এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন এস বি সি ফাউন্ডেশন।
কাজী আনিসুজ্জামান আরজু সমাজের অবহেলিত মানুষের কল্যাণে নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন। যিনি ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত পরিশ্রমী, সৎ এবং অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করেন। আরজু ১০ অক্টোবর ১৯৭৫ সালে যশোরে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম কাজী আবু জাহিদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, মাতা সৈয়দা আনজুমান আরা বেগম একজন গৃহিণী। শিক্ষাজীবনে তিনি এমবিএ ডিগ্রী অর্জনের পরে চাকরিতে যোগদান করেন। তার সহধর্মীনি স্কুল শিক্ষিকা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৩ সন্তানের জনক।
আরজু ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত। তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক- খুলনা বিভাগীয় সমিতি ঢাকার, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- বনশ্রীতে বসবাসরত খুলনা বিভাগীয় সমিতি ঢাকা, জীবন সদস্য- বৃহত্তর যশোর সমিতি ঢাকা, সাধারণ সম্পাদক- এস বি সি ফাউন্ডেশন (পারিবারিক সদস্যদের নিয়ে গঠিত), সহ সভাপতি- দারুল কুরআন সোলাইমানীয়া কওমি মাদ্রাসার (কারবালা, যশোর সদর), স্থায়ী সদস্য- বøাড ডোনার, সাংগঠনিক সম্পাদক-এসএস ফাউন্ডেশন, স্থায়ী সদস্য- যশোর জিলা স্কুল সমিতি ঢাকা। এক নজরে সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যেগে এস বি সি ফাউন্ডেশনের কাজের কিছু অংশ:
১। এলইইডিও এতিমখানা, মোহাম্মাদপুরে ক্লথ ফর ফুডপিস্ট্রিবিউশন প্রোগ্রাম ফর ঈদ-২০১৭। ২। ঈদুল ফিতর ২০১৭ এর পূর্ব মুহূর্তে অনাথ শিশুদের হাতে ঈদের নতুন জামা এবং প্রায় ৫শ পরিবারের হাতে খাবার তুলে দেওয়া হয় ঢাকার বাইরে ৬ টি জেলায় যথাক্রমেঃ শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী এবং পাবনায়। ৩। আর যেন কখনো কোন বাবা-মার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম না হয়, এ বিশ^াসকে সামনে রেখে “আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রম” এর মায়েদের কষ্ট লাঘবের জন্য স্থায়ী সুপেয় পানির এবং আসবাবপত্রের ব্যবস্থা করা হয়। ৪। যশোর জেলার অসম্বল মুক্তিযোদ্ধা কেরামত আলীকে আর্থিক সহযোগীতা ও ২ টি রিকশা প্রদান করা হয়। ৫। নড়াইল ও যশোর জেলায় দুই জন অসহায় মহিলাকে প্রশিক্ষণ প্রদান পূর্বক সেলাই মেশিন ঘর করে দেওয়া হয়েছে। ৬। ঝিনাইদহ, নড়াইল ও যশোর জেলায় সুবিধা বঞ্চিত প্রায় ১৬০০ মানুষের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ঔষধ বিতরণ করা হয়েছে। ৭। ঢাকার মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও ভুঁইয়াপাড়া খিলগাঁও এ সুবিধা বঞ্চিত মানুষের মাঝে বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ঔষধ বিতরণ করা হয়েছে। ৮। টাংগাইলের সখিপুর, যশোরের খোলাডাংগা, ঢাকার রামপুরা বনশ্রী এবং ধানমন্ডিতে পথশিশু বিদ্যালয়ের শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ ও খাবার বিতরণ করা হয়। ৯। দিনাজপুর ও ঢাকায় শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ। ১০। যশোর খোলাডাঙ্গায় প্রতিবন্ধী কাজলকে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ভ্যানের উপরে দোকান করে দেওয়া হয়েছে। ১১। করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ঢাকায় খিলগাঁও এবং তিতাসবাগ বস্তিতে ৪ বার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ এবং ঈদুল আজহায় ৪ টি গরু কোরবানি করে মাংস বিতরণ করা হয়। ১২। করোনায় চাকরী হারিয়ে দিশেহারা জনৈক মহিলা কে চাকুরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৩। করোনায় সহকর্মীদের মধ্যে কেউ আক্রান্ত হলে হাসপাতালে পৌঁছানো সহ চিকিৎসা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৪। কারো রক্তের প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করা। ১৫। গত ১৮ আগস্ট ২০২০ বনশ্রীতে ৪০ জন ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধী মানুষের মাঝে খাবার এবং নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করা হয়।