সম্প্রতি সমাপ্ত হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদের ২৫তম ও শেষ অধিবেশন। এবারের অধিবেশনগুলোতে বেশ কয়েকটি রের্কড সৃষ্টি হয়েছে। সংখ্যার দিক থেকে এবারের সংসদের অধিবেশন ছিল সর্বোচ্চ ও রেকর্ড সংখ্যক। গত ৪ বছর ৯ মাসে একাদশ সংসদের ২৫টি অধিবেশন হয়েছে, যেগুলোর প্রায় অর্ধেকই অনুষ্ঠিত হয়েছে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে। এর আগে অধিবেশনের রেকর্ড রয়েছে ২৩টি। একাদশ জাতীয় সংসদ বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত অধিবেশনের রেকর্ডও করেছে। ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিল চলতি সংসদের ৭ম অধিবেশন শুরুর পর মাত্র দেড় ঘণ্টা স্থায়ী ছিল।
দেশের ইতিহাসে প্রথম বিশেষ অধিবেশনও দেখা গেছে এবারের জাতীয় সংসদে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে প্রথম বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বসে আরেকটি বিশেষ অধিবেশন। এবারের সংসদ রেকর্ড গড়েছে স্বল্প সময়ের মধ্যে সব কমিটি গঠন করেও। শোকের মিছিলও ছিল দীর্ঘ- সংসদ চলাকালে মোট ৩১ জন সংসদ সদস্য মৃত্যুবরণ করেন।
২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারকে ধারাবাহিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র, সংকটসহ নানা বাধা মোকাবিলা করতে হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা করেও দেশের অভাবনীয় উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বৈশ্বিক প্রশংসা কুড়িয়েছে। পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক তৃতীয় বিমানবন্দর, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, এলএনজি টার্মিনাল, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ীতে প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন, গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বে একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে অবস্থান গ্রহণের বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এবার ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করা চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। ১ নভেম্বর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৯০ দিনের কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে, মাঠের রাজনীতি ততই উত্তপ্ত হচ্ছে। তবে সবার অংশগ্রহণে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। সকল আলোচনা-সমালোচনার মুখ্য জবাব হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যার মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণহীন, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জন সম্ভব। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ মানুষের সে প্রত্যাশাই রয়েছে।