জন্মভূমি ডেস্ক : এশিয়ার বাজারে বিপুল আমদানি সত্ত্বেও স্পট মার্কেটে অব্যাহত কমছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম। প্রধান রফতানিকারক দেশগুলো থেকে বিশ্ববাজারে সরবরাহ বাড়ার কারণেই বাজারদরে নিম্নমুখী প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা।
এশিয়া ও ইউরোপের মতো প্রধান আমদানিকারক দেশগুলোয় এবার শীতকালে চাহিদা বৃদ্ধির হার ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। ফলে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম কমতির দিকে। আবার বাজারদরে নিম্নমুখী প্রবণতার সুযোগ নিতে এশিয়ার দেশগুলো জ্বালানির আমদানি বাড়াচ্ছে লক্ষণীয় মাত্রায়।
তথ্য বলছে, ২ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়া সপ্তাহে উত্তর এশিয়ায় সরবরাহ হওয়া প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৯ ডলার ৬০ সেন্টে। আগের সপ্তাহে মূল্য ছিল ৯ ডলার ৫০ সেন্ট, যা সাত সপ্তাহের সর্বনিম্ন। বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কিছুটা বাড়লেও সার্বিকভাবে তা নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে।
স্পট মার্কেটে সাধারণত শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে এলএনজির দাম বেড়ে যায়। কারণ এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তি থাকে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে এলএনজির ব্যবহারও থাকে ঊর্ধ্বমুখী। বাকি সময় দুর্বল চাহিদার বিপরীতে দামও কমে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ বাজারপ্রবণতা ভেঙে গেছে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারে এলএনজির ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ার প্রত্যাশা করা হলেও তেমনটি ঘটেনি।
এশিয়ার স্পট মার্কেটে ২০২৩ সালের শেষের দিকে এলএনজির দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল। ওই সময় প্রতি এমএমবিটিইউর মূল্য দাঁড়ায় ৯ ডলারে। শীত মৌসুমের শুরুর দিকে দামে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। ২০ অক্টোবর প্রতি এমএমবিটিইউর দাম ওঠে ১৭ ডলার ৯০ সেন্টে। কিন্তু তারপর জ্বালানিটির মূল্য অব্যাহত কমছে, যা সর্বশেষ ৯ ডলার ৬০ সেন্টে ঠেকেছে।
পণ্যবাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলারের দেয়া তথ্যমতে, এশিয়ার বাজারে এলএনজি আমদানিতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও জ্বালানিটির দাম কমতির দিকে। এ অঞ্চলের দেশগুলো গত ডিসেম্বরে রেকর্ড পরিমাণ এলএনজি আমদানি করে। আমদানির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার টন। দুই বছরের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ আমদানি। এর আগে সর্বশেষ রেকর্ড আমদানি হয়েছিল ২০২১ সালের জানুয়ারিতে।
এদিকে চলতি বছরও শুরু হয়েছে বিপুল পরিমাণ আমদানির মধ্য দিয়ে। বছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জানুয়ারিতে এশিয়ার দেশগুলো ২ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার টন এলএনজি আমদানি করে, যা প্রায় রেকর্ড সর্বোচ্চের কাছাকাছি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ।
এশিয়ায় শীতকালীন এলএনজি আমদানি বৃদ্ধিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে চীন। ২০২৩ সালে দেশটি জাপানের কাছ থেকে আবারো শীর্ষ ক্রেতার অবস্থান দখল করে নিয়েছে। ডিসেম্বরে চীন ৮১ লাখ ৪০ হাজার টন এলএনজি আমদানি করে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। জানুয়ারিতে আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৭ লাখ ৮০ হাজার টনে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
ভারত এশিয়ার চতুর্থ শীর্ষ এলএনজি ক্রেতা। এক বছরের ব্যবধানে দেশটির এলএনজি আমদানিতেও উল্লম্ফন দেখা গেছে। ডিসেম্বরে দেশটি বিশ্ববাজার থেকে ১৮ লাখ ৬০ হাজার টন এলএনজি ক্রয় করে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে জানুয়ারিতে আমদানির পরিমাণ ছিল ২২ লাখ ৬০ হাজার টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৮ শতাংশ বেশি।
বিশ্লেষকরা জানান, এশিয়ার বাজারে এলএনজির চাহিদা বর্তমানে ব্যাপক। সে তুলনায় ইউরোপের বাজারে চাহিদা কম। এশিয়ায় বলিষ্ঠ চাহিদা সত্ত্বেও স্পট মার্কেটে জ্বালানিটির দাম কমছে। এর মূল কারণ ঊর্ধ্বমুখী সরবরাহ।
কেপলারের দেয়া তথ্যমতে, প্রধান রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরবরাহ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া। ডিসেম্বরে বিশ্ববাজারে যুক্তরাষ্ট্র ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টন এলএনজি রফতানি করে। জানুয়ারিতে রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ লাখ ৭০ হাজার টনে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া ডিসেম্বরে রেকর্ড ৭২ লাখ ২০ হাজার টন এলএনজি রফতানি করে। জানুয়ারিতে রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭০ লাখ ৮০ হাজার টনে।