শেখ সিরাজ উদ দৌলা লিংকন, কয়রা : ঘূর্ণিঝড় নিধিলির প্রভাবে খুলনার কয়রা উপকূলে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিতে আমন ফসল ও শীতকালীন সবজির ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
উপজেলার ৭ ইউনিয়ন ঘুরে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত কয়েকদিন যাবত বিভিন্ন স্থানে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে । অনেক কৃষক ধান কেটে মাটিতে রেখেছিল অনেকে ধান নিয়ে বাড়িতে তুলেছে। অধিকাংশ কৃষকের ধান মাত্র ফুলে বের হয়েছে ফুলন্ত ধানের গাছগুলি দমকা হওয়ার তোড়ে কাঁদা ও পানিতে লেপটে পড়েছে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টির প্রভাবে সদ্য ফুলে বের হওয়া ধানের গাছসহ মাটি ও পানিতে লুটিয়ে পড়ার কারণে শীষগুলি থেকে ফুল ঝরে যাওয়ায় অপরিপক্ত চিটা হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। মাটিতে কেটে রাখা ধান ভিজে কাঁদায় লেপ্টে ধান ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। অনেক কৃষকরা বৃষ্টির কারনে পাকা ধান কাটতে পারছে না। কয়রা সদর ইউনিয়নের ২ নং কয়রা গ্রামের কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন আমার ৫ বিঘা জমির মৎস ঘেরের মধ্যে লাগানো সদ্য ফুলান্ত ধান গাছগুলি বাতাসের তোড়ে ঘেরের ভিতরে পানিতে লেপটে পড়েছে এতে করে ঘেরে থাকা তেলাপিয়া প্রজাতির মাছে ধানের ক্ষতি করছে পানি নিষ্কাশন শুরু করেছি কিছু ধান নষ্ট তো হবেই, মহারাজপুর ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের কৃষক হাসান মাহমুদ বলেন ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম গাছে খুব ভালো হয়েছিল কিন্তু হঠাৎ দমকা হওয়ার কারণে গাছগুলি কাদা ও পানিতে লেপটে গেছে তিনি অর্ধেক ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। মদিনা বাদ গ্রামের কৃষক মাওলানা রাশেদুল ইসলাম বলেন আমার সদ্য রোপনকৃত ২০ কেজি আলু কাদায় পুতে গেছে আশা ছেড়ে দিয়েছি মাঠ শুকিয়ে গেলে ফের আবারো লাগানো হবে। একই কথা বলেন ৩ নং কয়রা গ্রামের কৃষক ইমদাদুল হক টিটুসহ অনেকেই তাদের সদ্য লাগানো আলুর ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। কয়েকজন কৃষক জানান জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করেছিলাম ফলন বাম্পার হয়েছে, বৃষ্টির জন্য ধান কাটতে পারছি না। আমাদী ইউনিয়নের ভান্ডারপোল গ্রামের কৃষক মোঃ জালাল উদ্দীন বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করেছিলাম। এবার ফলন বাম্পার হয়েছে। বুধবার ধান কাটা শুরু করছি ১ বিঘা জমিতে ধান কেটে খেতে ফেলে রাখছি বৃষ্টির জন্য বাকি ধান গুলো কাটতে পারছি না। দমকা বাতাসে কিছু টা আমন ধান নষ্ট হয়ে যাবে। মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের গিলাবাড়ি গ্রামের কৃষক মোঃ বাবু গাজী বলেন, আমি ১৬ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করেছিলাম। ৪ বিঘা জমির ধান কেটে মাঠে রাখা হয়েছিল বৃষ্টির জন্য বাকি ধান গুলো কাটতে পারিনি। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিলো।এই বৃষ্টির কারণে কিছু ধান নষ্ট হয়ে যাবে। অনেক কৃষকের দাবি আকস্মিক এই ঝড়ো হাওয়া বৃষ্টির কারণে তাদের কারো না কারো কমবেশি ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, এবছর উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ১৬ হাজার ২শ ৩৫ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছিল এরমধ্যে এক হাজার হেক্টর জমির আমন ফসল কাটা শেষ বাকি ২৫শ ১১ হেক্টর জমিতে থাকা ধান পড়ে গেছে ওই কর্মকর্তা বলেন পড়ে যাওয়া ধানে খুব বেশি ক্ষতি হবে না তবে ফলন একটু কম হবে। তিনি বলেন এরমধ্যে ৬৪ হেক্টর জমির ধান পানির নিচে এই ধানগুলো ক্ষতিগ্রস্তের আওতায় আসবে। তবে আকর্ষীক এই বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজির উপকার হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।