কয়রা প্রতিনিধি : খুলনার কয়রায় জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও উন্নীতকরণ (খুলনা জোন) প্রকল্পের আওতায় কয়রা-কাশিরহাটখোলা-নোয়াবেকি-
শ্যামনগর সড়কটির ৭ কিলোমিটার কাজের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়েছে। অবশেষে দীর্ঘ এক যুগ ভোগান্তির পর জনগুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটির মেরামত কাজের শুভ উদ্বোধন হওয়ায় (কয়রা- শ্যামনগর) দুই উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
২৩ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বেলা ১২ টায় প্রধান অতিথি হিসেবে কয়রা সদরের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির মধুর মোড়ে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে কাজের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন খুলনা-৬ (কয়রা পাইকগাছা) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান । দীর্ঘ অপেক্ষার পর সড়কের কাজের উদ্বোধন হওয়ায় এলাকাবাসী সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
উদ্বোধন কালে এমপি রশীদুজ্জামান শতাব্দীর মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে বুকে আঁকড়ে ধরে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিল এ দেশকে তিনি উন্নয়নের শিখরে উঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধীরা তার স্বপ্ন পুরনের সুযোগ দেই নাই। তারা শতাব্দীর মহানায়ক কে অত্যন্ত অসময়ে হত্যা করেছিল। তার হত্যার পর দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে তারই সুযোগ্য কন্যা এদেশের প্রধানমন্ত্রীত্ব লাভ করার পর বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। এই উন্নয়নের ধারাকে আরো বেগবান ও গতিময় করতে হবে। এজন্য তিনি প্রকল্পের গুণগতমান নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। তিনি ইতিহাসের অবহেলিত কয়রাকে মুছে দিয়ে সারা দেশের ন্যায় উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় কয়রাকে সামিল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানাযায, জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও উন্নীতকরণ (খুলনা জোন) প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে কয়রা-কাশিরহাটখোলা-নোয়াবেকি-শ্যামনগর সড়ক সংস্কারে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পায় মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ২৬ মে কার্যাদেশ পেয়েও যথাসময়ে কাজ শুরু করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ২০২০ সালের মে মাসে কাজ চলা অবস্থায় দুর্যোগের(আম্পান) কবলে পড়ে সড়কটি ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের সাইটে রাখা মালামাল ও ক্ষতিগ্রস্ত কাজ দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ২০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করলে ১০ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে দরপত্রটি বাতিল করা হয়। জনগণের ভোগান্তি ও আন্দোলন ও দাবির পেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর সড়কটি নতুন করে নির্মাণের জন্য প্রাক্কলন ও নকশা তৈরি করে পুনর্র্নিমাণের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়। কাজটি পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স । এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৯৫ লক্ষ্ টাকা। কাজটি সমাপ্ত হলে উপজেলার উত্তরবেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খুলনা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কাজের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন খুলনা ৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে শামছ্ উদ্দিন আহম্মেদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বি. এম তারিক উজ- জামান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা, সাধারণ সম্পাদক নীশিত রঞ্জন মিস্ত্রীসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
কয়রা মমিন সুপার মার্কেটের মালিক মাজেদুল মমিন বলেন ,ভাঙ্গা চোরা রাস্তার কারণে ব্যবসায়িক কাজে বিভিন্ন জায়গা থেকে মালামাল এনে বিক্রি করা কঠিন হচ্ছিল। এখন রাস্তার কাজ সম্পন্ন হলে অনেক দিনের কষ্ট দূর হবে।
কয়রা বাজার কমিটির সভাপতি সরদার জুলফিকর আলম জানান , অনেক দিন পর হলেও রাস্তাটির কাজ শুরু হলো। তবে সঠিকভাবে যাতে কাজ সম্পন্ন হয় সেদিকে কর্তৃপক্ষকে নজর দেওয়া উচিত। কাজের মান ঠিকমতো না হলে কষ্ট থেকেই যাবে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স জানান,৪৯ কোটি ৯৫ লক্ষ্ টাকা ব্যয়ে রাস্তার কাজটি আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।