মোঃ এজাজ আলী
নগরীর হাজী মেহের আলী রোড এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন আলামিন শেখ। পেশায় ছিলেন একজন হোটেল কর্মচারী। লকডাউনে হোটেল রেষ্টুরেন্ট বন্ধ। জন্মের পর থেকে এই একটি কাজই শিখেছেন। প্রথম তিন দিন ধরে বসেছিলেন। হাতে এমন কোনো সঞ্চয় নেই যে, মাসখানেক বসে খাবেন। তাই উপায়ন্তর না দেখে এক বন্ধুর পরামর্শে নেমে পড়েন ভ্রাম্যমাণ তরকারী বিক্রেতা হিসেবে। ভ্যানে করে বিভিন্ন সবজি নিয়ে এলাকায় ঘুরে ঘুরে তরকারী বিক্রি করেন আলামিন। খুলনার সাতরাস্তা মোড়ের একটি হোটেলে কর্মচারী ছিলেন তিনি। হোটেল মালিক বলেছেন, আপাতত গ্রামের বাড়ি চলে যেতে। গত বছরও এমন সমস্যায় পড়েছিলাম। সেই সময়ে গ্রামে কৃষিকাজ করেছিলাম। কিন্তু এখন সেখানে কাজ নেই। তাই চিন্তা করলাম পরিবারের খরচ তো যোগাতে হবে। ভ্যানে ঘুরে ঘুরে প্রতিদিন তরকারী বিক্রি করে দুই/তিনশ টাকা আয় হচ্ছে। তা দিয়ে কোনোমতে কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছি। নগরীর শান্তিধাম মোড় এলাকায় স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন মোস্তফা। তিনি নগরীর নিক্সন মার্কেটে পুরাতন কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন। লকডাউনে দোকান বন্ধ হয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়েন তিনি। পুরো সংসারের দায় তার ওপরে। তাই পরিবারের খরচ চালাতে কপালে চিন্তার ভাঁজ। কোনো কাজ না করলে সংসার চলবে কিভাবে। নিরূপায় হয়ে তাই বনে যান পুরাতন গেঞ্জি, শার্ট বিক্রেতা। ভ্যানে করে পুরাতন গেঞ্জি, শার্ট বিক্রি করছেন ঘুরে ঘুরে। জানতে চাইলে গতকাল রবিবার দুপুরে তিনি বলেন, সারাদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে দুই থেকে তিনশ টাকা আয় হয়। সেগুলো দিয়ে কোনোমতে সংসারের খরচ চালাই। সরকার লকডাইন দিয়েছে ঠিক, কিন্তু আমাদের মতো খেটে কাওয়া মানুষের কোনো সাহায্য–সহায়তা রাখেনি। ঘরের বউ–বাচ্চাদের তো আর না খাইয়ে রাখতে পারি না। সেলিম পেশায় প্রাইভেটকার চালক। নগরীর ইকবাল নগর এলাকায় বড় এক কর্তার প্রাইভেটকার চালান। লকডাউন শুরুর পর আপাতত তাকে কাজ থেকে ছুটি দেওয়া হয়। নিরূপায় হয়ে নেমে পড়েন মাস্ক, স্যানিটাইজার বিক্রির কাজে। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে চাদর বিছিয়ে এসব পণ্য বিক্রি করছেন তিনি। তিনি বলেন, আপাতত কোনো কাজ নেই। তাই মালিক ছুটি দিয়েছেন। প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নিয়েছিলাম। লকডাউন কখন শেষ হবে তা তো ঠিক নেই। তাই চিন্তা করলাম বসে থেকে কি লাভ? এখন পর্যন্ত বিক্রি বেশ ভালোই হচ্ছে। শুধু আলামিন, মোস্তফা কিংবা সেলিম নয়, এ রকম আরো মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছেন। নিজের ও পরিবারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেশা পরিবর্তন করে আয় রোজগারের নতুন খাত তৈরী করছেন তারা।