- ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট তৈরি
- নাপার কাঁচামালের ঘাড়তি দাবি
এম সাইফুল ইসলাম
করোনার ঊর্ধ্বগতি চলছে দেশে। প্রতিদিনই রেকর্ডসংখ্যক রোগী শনাক্তের খবর মিলছে। এই অবস্থায় খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লাগামহীন ওষুধের দাম। খোঁজ মিলছেনা নাপাসহ প্রয়োজনীয় কয়েকটি ঔষধ।
অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য সাধারণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। এ ছাড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি ওষুধের দাম আকাশছোঁয়া। প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ নাপা উধাও হয়ে গেছে বাজার থেকে। এক পাতা নাপা ওষুধের জন্য এক ফার্মেসি থেকে আরেক ফার্মেসিতে ঘুরতে হচ্ছে। সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যাকটেমরা ইনজেকশন দ্বিগুণ দামেও মিলছে না।
পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে ওষুধের দামের তারতম্য সবচেয়ে বেশি। ওষুধ বিক্রেতারা বলছেন, পরিবহন সঙ্কট ও কাঁচামাল সঙ্কটের অজুহাত দেখিয়ে বেশ কিছু অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ফার্মেসিগুলোতে ওষুধের খুচরা মূল্যে দেখা যাচ্ছে অনেক তারতম্য। কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে দোকানিরা। তারা করোনার জন্য জরুরি ওষুধ ৫০ টাকার স্ক্যাবো ৬ এমজি ট্যাবলেট বিক্রি করছে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া বেশকিছু ওষুধের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ওষুধের পাশাপাশি করোনা প্রাদুর্ভাবের সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দেওয়া সার্জিক্যাল মাস্কসহ অন্যান্য মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, জীবাণুনাশক স্যাভলন, ডেটল, দেহে অক্সিজেনের মাত্রামাপক অক্সিমিটারের দাম হাঁকা হচ্ছে ইচ্ছামতো। একেক দোকানে একেক ধরনের দাম হাঁকা হচ্ছে। যার কাছে যেমন পাওয়া যাচ্ছে তেমন দাম নিচ্ছে ওষুধ বিক্রেতারা। একই এলাকার একেক দোকানে একেক ধরনের দাম নেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহর ও গ্রামের মানুষ ঠান্ডা গরম লাগার কারনে ঘরে-ঘরে জ্বর, খুসখুসে কাঁশি ও ঠান্ডা গরমে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে গেলে জ্বরের জন্য নাপা, ঠান্ডা গরম লাগলে ফেকজো খেতে বলছেন। অথচ বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ফেকজো ওষুধ পাওয়া গেলেও বেক্সিমিকো কোম্পানীর নাপা গ্রুপের কোন ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ওষুধ কিনতে এসে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। ওষুধ না পাওয়ায় তাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
করোনাভাইরাস ও এর উপসর্গ থেকে সেরে উঠতে ইভেরা ও ডক্সিক্যাপ নামে ওষুধ বিক্রির ধুম পড়েছে। প্যারাসিটামল গ্রুপের নাপা ফার্মেসিতে পাওয়া যাচ্ছে না। ফার্মেসি ঘুরে জানা যায়, চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে নাপা ৫০০ এমজি, নাপা এক্সটেন্ড, নাপা এক্সট্রা দিচ্ছেন। নাপা ওষুধ সরবরাহ কম। নাপা না থাকলেও অন্য কোম্পানির প্যারাসিটামল ওষুধের ঘাটতি নেই বলে জানান তারা।
ফার্মেসি মালিকদের অভিযোগ, তারা ওষুধের সরবরাহই পাচ্ছেন কম। বিক্রয় প্রতিনিধিরাই বেশি দাম নিচ্ছেন দোকানিদের কাছ থেকে।
ওষুধের দাম যাই থাকুক না কেন মার্কেটে প্রচুর চাহিদা থাকার কারণে ওষুধ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম নিচ্ছে এমন অভিযোগ ভূক্তভোগিদের।
হেরাজ মার্কেটে ওষুধ কিনতে আসা জালাল আহমেদ নামে একজন জানান, ডাক্তারের প্রেসক্রিপেশন অনুযায়ী নাপা ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্যোগময় সময়ে যদি ওষুধ পাওয়া না যায় তাহলে কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সেলসম্যান জানান, নাপা ওষুধ মানুষ বেশি খাচ্ছে। এ কারনে এই কোম্পানীর নাপা ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে নাপা নেই। কোম্পানি সাপ্লাই দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তারা। অন্যান্য কোম্পানির প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দোকানে রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে প্যারাসিটামল জাতীয় অন্যান্য ওষুধ বাজারে থাকলেও শুধু নাপা কিনতে ক্রেতারা এতো ভীড় করছেন কোনো তার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না ফার্মেসি মালিকরা।
এ বিষয়ে বেক্সিমো কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, শুধু খুলনা ও যশোরে নয়, গত ১০ দিন ধরে দেশের সব জেলায় নাপার সরবরাহ কম রয়েছে। কোম্পানির কাছে নাপার কাঁচামালের সরবরাহ কম থাকার কারণে ও ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এমন সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি। কয়েক দিনের মধ্যেই আবার বাজারে সরবরাহ করা হবে।
গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা: সাইফুজ্জামান জিয়ন জানান, বাজারে যদি নাপা ওষুধের সংকট দেখা দেয় তাহলে প্যারাসিটামল বা অন্য কোম্পানীর ওষুধ খেতে পারবে। তাতে জ্বর বা ঠান্ডা-গরম লাগলে ভাল হয়ে যাবে। তবে এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
করোনার ঊর্ধ্বগতিতে উধাও বেক্সিমকোর নাপা
Leave a comment