অভিজিৎ পাল
আজ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ইং চার বছর পূর্তি হয়ে পাঁচ বছরে পদার্পণ হচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের। চার বছরে নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়ক ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ১৮শত ২৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। মেয়রের দাবি যার ৮৫ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, বাকী কাজ আগামী বছরের জানুয়ারির ভিতর শেষ হবে। অপরদিকে নগরবাসীর দাবি জলাবদ্ধতা, রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন কাজের দীর্ঘসূত্রিতায় তৈরী হয়েছে ভোগান্তি। অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন খুলনা সিটি কর্পোরেশন উন্নয়নের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নে ১৫ শত কোটি টাকার প্রকল্প।
২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৮২৩ কোটি টাকার প্রকল্প নেয় সিটি কর্পোরেশন। যার মেয়াদ ২০২২ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতি ও নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির অর্থ ছাড়ে দেরী হওয়ায় মেয়াদ বাড়ছে আরো এক বছর।
এর পাশাপাশি নগরজুড়ে চলছে সড়ক উন্নয়নের ৬০৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সড়ক উন্নয়ন কাজ। যার ৭০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলছেন মেয়র। বাকি কাজও শীঘ্রই সম্পন্ন হবে বলে দাবি করছেন তিনি। যদিও এ কাজের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে ভোগান্তির অভিযোগ রয়েছে নগরবাসীর। তেমনি করোনা ও নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে দীর্ঘসূত্রিতার কথা স্বীকারও করেছেন মেয়র।
এছাড়াও নগরীর আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে ৩৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প। যার একশত কোটি টাকা জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
আগামী বছর জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারির মধ্যে এই ১৮শত ২৮ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলছেন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
তবে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সময়ে নাগরিক সেবার মান নিয়ে রয়েছে নাগরিক নেতাদেরও ভিন্ন মত।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব আশরাফুল ইসলাম বলেন, নাগরিক সেবার মান উন্নয়নে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নও হয়েছে আবার কিছু হচ্ছে। কিন্তু সুফল আমরা পাচ্ছি না। কারণ সঠিক নিয়মে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে না। আমরা শত কোটি টাকার ড্রেনেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি কিন্তু ময়ূর নদসহ ২২ খাল পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছি না। বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ক্ষমতায় আসার পর তিনিও শুরু করেছিল অবৈধ মুক্তকরণ কাজ। কিন্তু পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতে পারে নি। যার কারণে সেপ্টেম্বরের বৃষ্টিতে আমরা পুরো নগরবাসী ২৪ ঘন্টার মত পানিবন্দি ছিলাম। এছাড়াও রূপসা ও ভৈরব নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণেও পানি নামতে সমস্যা হয় শহর থেকে বলছেন তিনি। কিন্তু সেটি খননের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ আমরা দেখছি না।
অপরদিকে একটি বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল আমরা এখনও পেতে পারিনি। কারণ অধিকাংশ কাজ এখনও চলমান। কাজ সম্পন্ন হলে উন্নয়ন কাজের সুফল পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি উন্নয়ন কাজের দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে দ্রæত সম্পন্নেরও তাগিদ দেন। পাশাপাশি সিটি গভর্নেস ব্যবস্থা বাস্তবায়নে কেসিসির সাথে কেডিএ ও ওয়াসাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়কে জোর দেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন।
নাগরিকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলছেন করোনা মহামারী, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে উন্নয়ন কাজের মেয়াদ বাড়লেও আগামী জানুয়ারির মধ্যে তা শেষ হয়ে যাবে। কেসিসির সাথে অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়হীনতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমার ক্ষমতার ভিতর আমি চেষ্টা করছি কিন্তু এ ব্যাপারে সাংবিধানিক ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন।
এ সময় তিনি আরো জানান, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ১৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প অর্থ মন্ত্রণালয়ে ছাড়ের উদ্দেশ্যে জমা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র। যার মধ্যে রয়েছে পাবলিক হল নির্মাণসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ। যদিও প্রকল্পটি ছিল ২৪০০ কোটি টাকার পরে সেটা কমিয়ে আনা হয়েছে ১৫০০ কোটি টাকায়।
কেসিসিতে ভৌত উন্নয়ন প্রকল্পে চার বছরে এসেছে ১৫ শ’ কোটি টাকা
Leave a comment