আসামি চালু ও ভুট্টোর রিমাণ্ড শুনানি এখনও হয়নি
জন্মভূমি রিপোর্ট : কক্সবাজার সদর মডেল থানা এলাকায় আততায়ীর আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে নিহত খুলনা সিটি কর্পোরেশন-কেসিসি’র সাবের কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গোলাম রব্বানী টিপু (৫৫) হত্যা মামলার দু’ সন্দেহভাজন আসামিকে ১০ দিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। যদিও সোমবার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আদালত রিমাণ্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য্য করেননি বলে পুলিশ জানিয়েছে। খুন হওয়ার আগ পর্যন্ত তার সাথে থাকা রুমি নামের ওই নারীর সন্ধান এখনও মেলেনি। উদ্ধার হয়নি ঘাতকের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র।
কেসিসি’র ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং আওয়াামী লীগের ওই ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে চালু এবং কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া এলাকার বাসিন্দা মেজবাহ উল্লাহ ভুট্টো নামে দুই আসামিকে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন এর একটি টিম কক্সবাজার শহরের ভিন্ন-ভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করেছিল। গত ৯ জানুয়ারি সকালে ভিকটিম টিপু আসামি শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে চালুর সাথে রুমি নামে এক নারীসহ কক্সবাজারের গোল্ডেন হিল হোটেলে ওঠেন। সন্ধ্যার পর টিপু ওই নারীকে সাথে নিয়ে হোটেল থেকে বের হন। রাত ৯ টার পরে হোটেল সীগালের নিকটতম দূরত্বে কিলারের টার্গেট হন। আততায়ী তার মাথায় গুলি করে। আশ-পাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ পিস্তলের একটি গুলির খোসা জব্দ করে। হোটেল গোল্ডেন হিল থেকে নিহতের সাথে থাকা ওই নারীর নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে। যদিও তার নাম-ঠিকানা সঠিক কিনা, তা এখনও যাচাই-বাছাই চলছে বলে কক্সবাজার সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোঃ নূরুজ্জামান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তাকে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, গত ১০ জানুয়ারি নিহতের ভগ্নিপতি ইউনুস আলী শেখ কক্সবাজার সদর থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। তবে হত্যাকাণ্ডের কারণ কি হতে পারে, এ ব্যাপারে তিনি এজাহারে কিছু উল্লেখ করেননি।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ইলিয়াস খান গত রাতে দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, খুনের রহস্য উদঘাটন, ঘাতকের ব্যাবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টায় দু’ আসামিকে গত ১১ জানুয়ারি ১০ দিনের রিমাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে, এখনও শুনানির দিন ধার্য্য হয়নি। কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত কাজ চলছে বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, তদন্তের স্বার্থে ক্লুগুলো প্রকাশ করা সম্ভব নয়। থানা পুলিশসহ কয়েকটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করছে।
দৌলতপুর থানা এলাকার কয়েকটি সূত্র বলছেন, নিহত গোলাম রব্বানী টিপু ৯০ দশকের শেষের দিকে চরমপন্থী সংগঠন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই সংগঠনের এক নেতার সাথে মতবিরোধের জেরে পরবর্তীতে তিনি আরেকটি চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। বিগত আওয়ামী শাসনামলে তিনি শেখ সোহেল, এসএম কামালসহ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থেকে মহানগরী খুলনার অপরাধ জগতে দাপুটে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তিনি পাশর্^বর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান এনে মাদক কারবার পরিচালনা করতেন। তিনি এলাকায় প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করতেন, সাথে থাকতেন ১০/১৫ জনের একটি বাহিনি। পাট ব্যাবসায়ী, তেলের ডিপোসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদাবাজি করতেন। এসব কিছুর মধ্যকার কোনো বিষয় হত্যাকাণ্ডের মোটিভ হিসেবে বিবেচনা করছেন কিনা? কক্সবাজার সদর থানার (ওসি) এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর আতাহার আলী দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, নিহত গোলাম রব্বানী টিপু দিনে-দুপুরে সংগঠিত হুজি শহিদ হত্যা মামলা এবং একটি মারামারি মামলার আসামি। মামলা দুইটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।