শেখ আব্দুল হামিদ
মানুষের অসচেতনতার কারণে ফের মার্চ মাসেই ঘাতকব্যাধী করোনার আক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। দু’এক দিনের মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হবে। গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে ১৭৫টি নমুনা পরীক্ষায় ১২ জনের দেহে করোনা পজেটিভ সনাক্ত হয়েছে। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ এ দিনে খুলনায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ১৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এসময় চার দিনে মোট ৩০ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন।
গেল বছরের ন্যায় ঠিক মার্চ মাসেই করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল আক্রান্ত ১২ জনের মধ্যে পুরুষ ছিলেন ৭ জন এবং মহিলা ৫ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৭ হাজার ৫১৬ জন। এ সময়ের মধ্যে মোট মারা গেছেন ১১৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে খুলনা সিটিতে রয়েছেন ৬ হাজার ৯ জন আার উপজেলায় ১ হাজার ৫০৭ জন।
গত বছর ১৩ মার্চ থেকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তি শুরু হয়। ১৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হলে মানুষের মাঝে আতংক ছড়াতে থাকে। এপ্রিল মাস থেকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়লেও মে মাসের পর জুনে এর সংখ্যা হয় ১ হাজার ৬৫৮ জন। এসময় মৃত্যু হয় ১৭ জনের। জুলাই মাসে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় ২ হাজার ৩১৭ জন আর মৃত্যু হয় ৪৪ জনের। আগষ্ট মাস থেকে আক্রান্তের সংখ্য কমতে থাকে। এ মাসে আক্রান্ত হয় ১ হাজার ২৮৮ জন। এ মাসে মৃত্যু হয় ১৩ জনের। এ ভাবে একটু একটু করে কমে আসলেও ২০২০ সালে মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হয় ৭ হাজার ১৬২ জন। এ বছর মোট মৃত্যু হয় ১১৪ জনের।
২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত আক্রান্ত হলেন ৩৫৪ জন আর আড়াই মাসে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। মানুষের মাঝে অসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। খুলনা উকিল বারের প্রবীন আইনজীবী এ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী মোল্যা বলেন, খুলনায় প্রশাসনের তৎপরতা কমে যাওয়ায় প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষই মাস্ক ব্যবহার করছে না। তারা এখন হাত ধোয়ার কথাও ভুলে গেছেন। তাছাড়া অনেকেই ভাবছেন টিকা গ্রহণ করা হয়েছে তাই আক্রান্তের ভয় নেই।
প্রথম করোনা ভাইরাস দেখা দিলে মোকাবেলায় জেলার সর্বত্র ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। জেলা সদর ছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় খোলা হয় কোয়ারেন্টাইন ইউনিট। হাসপাতাল গুলোতে ব্যবস্থা করা হয় আইসোলেশনের। সার্বক্ষনিক ডাক্তার ও নার্সদের সতর্কবস্থায় রাখা হয়। তারা প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করেন। স্বাভাবিক ভাবে জ্বর বা সর্দিকাশি হলে তাদেরকে পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
করোনা ভাইরাস আতংকে গ্রামের হাট-বাজার গুলোতে মানুষের উপস্থিতি কমে যায়। মানুষ কেনা কাটার দিকে ঝুঁকে পড়ে। হাট-বাজারে মানুষের উপস্থিতি অর্ধেকে নেমে আসে। মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় চাল ডাল তেল চিনি আলু পিঁয়াজ কিনে ঘরে মজুত করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বত্র মাইকিং করে সতর্ক করা হয়। এখন মানুষ যেন সে সতর্কতা ভুলে গেছে।
খুলনা সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আবারও বাড়তে শুরু করেছে। তাই প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য। আগামী দু’একদিনের মধ্যেই সর্বত্র শুরু হবে। মানুষ এখন অসচেতন হয়ে পড়েছে। তাই করোনার ব্যপকতা এড়াতে আদালত পরিচালনা ছাড়া উপায় নেই। তিনি বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকের মাধ্যমে প্রচার করা চলছে। তবুও মানুুষ সতর্কতা অবলম্বন করছে না।