জন্মভূমি রিপোর্ট
মহামারী করোনা দুর্যোগে আভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করা গণপরিবহণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে বাক-বিতÐা হচ্ছে। কোথাওবা ইজিবাইকে যাত্রীদের ছয় ছিটে নয় জনকে বসাতে দেখা গেছে। বসার জায়গার সংকটে নারীরা চরম বিবৃতকর অবস্থার মধ্যে যাতায়াতে বাধ্য হয়েছেন।
চলমান লকডাউনে খুলনা থেকে দূর পাল্লার যানবাহন চলচল বন্ধ থাকলেও একটি রুটে নিয়ম মানছে না। সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে বাগেরহাট, মোংলা ও পিরোজপুরে বাস চলাচল করছে। শ্রমিক নেতারা ওই পথে বাস বন্ধে সক্ষম হচ্ছেন না। অন্যদিকে, জেলার মধ্যে চারটি রুটে বাস চলছে। সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে পাইকগাছা, কয়রা, সাতক্ষীরার সুভাসিনি, সেনেরবাজার টু সাচিয়াদহ এবং চলতি পথে বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের ওঠানো-নামানো হচ্ছে। ৪০, ৪২ ও ৫৭ সিটের বাসগুলোতে যাত্রীদের ঠাসাঠাসি। শিশু, নারী ও বৃদ্ধ অনেকেই দাড়িয়ে গন্তব্যে পৌছাচ্ছেন। রবেশিরভাগ বাসেই ফ্যান নেই। প্রচÐ গরমে যাত্রীদের নাজেহাল অবস্থা। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। অধিকাংশ বাসের সিটগুলো অপরিষ্কার। রবেশ কিছু বাসের শরীর ক্ষত-বিক্ষত, বিচ্ছিন্নভাবে রঙের অবরণ দিয়ে থোবড়ানো অবস্থা ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন ও শ্রমিক নেতাদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, আভ্যন্তরীন রুটে ৮০-৯০ টি বাস চলছে। এর মধ্যে অন্তত এক ডজন বাস আনফিট না হলেও ভেতর ও বাইরের চেহারা খারাপ। ঈদ উপলক্ষে ভাড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে একটি বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় ও যথেচ্ছ যাত্রী বহন নিয়ে জনৈক হেলপারের সাথে কয়েকজন যাত্রীর বাক-বিতÐার দৃশ্য চোঁখে পড়েছে। তাদের ভূমিকা অনেকটা মারমুখি ছিল।
খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, স্বাস্থ্য বিধি মানাতে চেষ্টার কমতি নেই। কিন্তু যাত্রী ও শ্রমিকরা এ ব্যাপারে উদাসীন। বাড়তি যাত্রী বহন ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নেপথ্যে একজন শ্রমিক নেতা রয়েছেন। তিনিসহ তার অনুসারী অন্তত ৩০ জনের একটি বাহিনী যাত্রীদের ভোগান্তি দিয়ে পকেট কাটা ওই অর্থের সুবিধাভোগী।
গতকাল বেলা প্রায় ১১ টা। কয়রা উপজেলার চাঁদ আলী ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে ১০-১৫ টি ইজিবাইকের সারি ছিল। চাঁদআলী ব্রীজ থেকে শিববাড়ী ব্রীজ পর্যন্ত ৪০ টাকা ও কাটাখালি বাজার পর্যন্ত ৩৫ টাকা হারে ভাড়া আদায় করা হতো। ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ২০ টাকা হারে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। একটি ইজিবাইকের সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ছয় জন যাত্রী ও একজন চালক। কিন্ত চালকসহ নয় জনকে চলাচল করতে দেখা গেছে। দু’জন যাত্রীর ছিটে তিন জনকে বসানো নিয়ে বিশেষত: নারীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছিলেন। সেখানে জনৈক ব্যক্তি ইজিবাইক প্রতি ১০ টাকা করে আদায় করছিলেন। তার কাছে চার জনের ছিটে ছয় জন বসানোর ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি ওই ইজিবাইক স্ট্যাÐের একজন নিয়ন্ত্রণকারীকে দেখিয়ে দেন। তিনি মোঃ তৈয়েবুর রহমান। ওই ব্যক্তি সেখানে জ্বালানী তেল, এ্যামব্যুলেন্স-মাইক্রো ও প্রাইভেট কার ভাড়ার ব্যবসার পাশাপাশি খাদ্য পণ্য এবং ইট, বালু, বাঁশ ও জ্বালানি কাঠের বাণিজ্য করেন। করোনাকালে চার জনের সিটে ছয় জন বসানো এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দেশে করোনা-টরোনা বলে কিছু নেই। ইজিবাইক সম্পর্কে জানার জন্য তিনি স্ট্যাটারের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। এরপর নিজেকে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির নিকটজন হিসেবে পরিচয় দিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
ওই উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় নছিমন, করিমনসহ অন্তত দেড়শ’ অবৈধ যানবাহন চলাচল করে। যেগুলোতে যাত্রী, ইট, বালু ও অন্যান্য মালামাল পরিবহন হয়। আনফিট ওইসব বাহণের বেপরোয়া চলাচলে বিভিন্ন সময় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। কয়েকজন ইজি বাইক চালক ও স্থানীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঁচ জনের বেশি যাত্রী বহন না করতে পুলিশের মাধ্যমে ইজি বাইক চালকদের প্রতি বার্তা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে দোষীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। অবৈধ আনফিট বাহন চলাচল বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।