জন্মভূমি রিপোর্ট : নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন মজিদ স্মরনী সড়কের মোল্লা বাড়ীর মোড় এলাকার সামি হাসপাতালে চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে । পাশাপাশি প্রসুতি নারীর জীবনও বিপন্ন হতে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওজোপাডিকো এর কর্মকর্তা আফসার হাসান তার গর্ভবতী স্ত্রী নাজমা আক্তার (৩২) কে গত মার্চ মাস থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ ফারজানা ইয়াসমিন লুনার তত্বাবধানে রুটিন চেক-আপ করাচ্ছিলেন। ডাক্তার লুনা সামি হাসপাতালে অবস্থান করে ওই গৃহবধূকে গর্ভকালীন চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন। গত ২০ নভেম্বর ওই চিকিৎসক রোগীর স্বামীকে ফোন করে রেগুলার চেক-আপ এবং বিস্তারিত কথা বলার জন্য সামি হাসপাতালে আসতে বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে ওই দম্পতি সামি হাসপাতালে আসেন, তখন ডাঃ গর্ভবতীর শারিরিক অবস্থা পর্যবেক্ষন করেন এবং ২৪ নভেম্বর সিজার করার জন্য দিন ধার্য্য করেন। ভুক্তভোগীর স্বামী আফসার হাসান দৈনিক জন্মভূমিকে এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, ২১ নভেম্বর ভোর রাত সাড়ে ৪ টার দিকে তার স্ত্রীর ব্যাথা ওঠলে তিনি ওই চিকিৎসককে ফোন করেন। তখন ডাক্তার তাকে বলেন, নরমালই বাচ্চা প্রসব করানোর ট্রাই করবেন কিনা? উত্তরে আফসার বলেন, ট্রাই করতেই পারি যদি আপনি বলেন। এরপর নাজমাকে ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। তখন একজন পুরুষ চিকিৎসক ছিলেন, একজন নার্সও ছিলেন। কিন্তু ডেলিভারি করানোর মতো কোনো নার্স ছিলেন না। পরবর্তীতে কামিনি নামে একজন নার্সকে ডেকে আনা হয়। চার জন সেবিকা তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। কিন্তু ডাঃ ফারজানা ইয়াসমিন লুনা আসেননি। ওটির বাইরে বসে তার স্বামী স্ত্রীর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে একজন এনেসথেসিয়া চিকিৎসক এসে তাকে বলেন-বাচ্চার পালস পাচ্ছি না, হার্টবিট নেই। তারা মৃত পুত্র সন্তান গর্ভ থেকে বের করেছেন। কিন্তু ওটিতে নেওয়ার আগেও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সবই স্বাভাবিক ছিল বলে ভুক্তভোগী পিতা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ডাঃ লুনা এসে বলেন- আমি নরমাল ডেলিভারি করি না, সিজার করি। তাহলে এখানে আসতে বললেন কেন? যদি সিজারই করেন, তাহলে যথাসময়ে আসলেন না কেন? হতভাগ্যের এসব প্রশ্নের জবাবে ডাঃ বলেন, তিনি প্রসূতি নারীকে দেখতে এসেছেন। দু’-তিন মিনিটের মধ্যেই তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এরপর মৃত সন্তান প্রসব করা নারীকে বেডে নেয়া হয়। তখন তার স্বামী মৃত নবজাতকের দাফনের কাজ করছিলেন। দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি হাসপাতালে আসলে একজন নার্স এসে বলেন, প্রসূতির প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে। রক্ত লাগবে। এরপর তাকে আফসারের ইচ্ছা অনুযায়ি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা প্রাথমিক পরীক্ষা করে দেখতে পান, সন্তান প্রসবের পর পুরোপুরি প্লাসেন্টা বের করা হয়নি। জরায়ুর মুখে আটটি সেলাই রয়েছে। নার্সরা জমাট বাঁধা এক ট্রে রক্ত বের করেন। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে জানিয়েছেন- প্রসূতি মায়ের জীবনই বিপন্ন হতে চলেছিল। গত রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হতভাগিনী মায়ের শারিরিক অবস্থা স্থিতিশিল ছিল বলে তার স্বামী জানিয়েছেন।
ডাঃ ফারজানা ইয়াসমিন লুনা গত রাত সাড়ে ৯ টার দিকে দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, ভোর রাত সাড়ে ৪ টার দিকে ওই প্রসূতির স্বামী তাকে ফোন করে স্ত্রীর পানি ভাংবার কথা জানান। তখন তিনি ব্যাথা ওঠার কথা বলেননি। তাকে বলা হয়-আপনি কি নরমাল ডেলিভারি চান? তাহলে হাসপাতালে ভর্তি করান। কিন্তু ওই গর্ভবতীকে ডেলিভারি রুমে নিয়ে যাওয়ার কথা ডিউটি ডাক্তার এবং সিস্টাররা তাকে জানাননি। যে কারণে তিনি সেখানে উপস্থিত হতে পারেননি। সকাল সোয়া ৯ টার দিকে তিনি নিজ দায়িত্বে ওই প্রসূতি নারীকে দেখতে গিয়েছিলেন। তার আগেই নবজাতকের মৃত্যু ঘটেছে। তিনি তাকে অবহিত না করানোর জন্য দায়ীদের দোষারোপ করছেন। নবজাতকের মৃত্যুর জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। ওটিতে এমবিবিএস ডাঃ হাবিবুল্লাহসহ ডিপ্লোমা সিস্টাররা উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
খুলনায় চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ
Leave a comment