খুলনার নদ-নদীতে ইলিশের আনাগোনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন স্থানের জেলেরা ইলিশ আহরণ শুরু করেছেন। কেউবা নৌকা-জাল মেরামত করে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জেলে পল্লীর বাসিন্দারা সংসারে স্বচ্ছলতার স্বপ্নে সময় পার করছেন। তবে, কোথাও-কোথাও অসাধু জেলেরা নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের হিসেবে খুলনার নয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৪৪ হাজার ১শ’ ৫৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। অনেকে নিবন্ধিত হয়ে পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন নি। জেলেরা পশুর, শিবসা, ভদ্রা, ঢাকী, চুনকুড়ি, মাদুরপাল্টা, কাজীবাছা, শৈলমারী, গ্যাংঢ়াইল, তেলিগাতী, দেলুটি, হাবড়খানা, ভৈরব, রূপসা, আত্রাই ও মজুদখালি নদী থেকে ইলিশ আহরণ করেন। খুলনার উপজেলা সমূহের মধ্যে দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও রূপসার জেলেরা বেশি ইলিশ আহরণ করেন। পাশাপাশি তেরখাদা, দিঘলিয়া, ডুমুরিয়া ও পাইকগাছা উপজেলার জেলারা নদী থেকে ইলিশ শিকার করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জেলেরা বলেন, মধ্য শ্রাবণ থেকে মাঝ কার্তিক পর্যন্ত তারা নদী থেকে ইলিশ ধরেন। প্রতি বছর এমন সময় সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরে। পেশাদার জেলেদের পাশাপাশি অনেক কৃষক, বর্গাচাষী, ইটভাটা শ্রমিক ও দিন মজুরেরা নৌকা-জাল কিনে নদীতে নামেন।
খুলনা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর’র জরিপ কর্মকর্তা বিধান চন্দ্র মÐল দৈনিক জন্মভ‚মিকে বলেন, আগস্টের শুরু থেকেই খুলনার নদ-নদীতে ইলিশের আনা-গোনা শুরু হয়। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে ইলিশের প্রাচুর্যতা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এসব নদ-নদী থেকে ১১’শ ৯১ দশমিক ৭৮ মেট্রিকটন ইলিশ আহরণ হয়। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইলিশ আহরণের পরিমাণ বেড়ে ১৪শ’ ৪১ মেট্রিকটনে দাড়ায়। মা ইলিশ সংরক্ষণ ও জাটকা শিকার বন্ধে এবং নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হওয়ায় ইলিশের পরিমাণ বেড়েছে।
তেরখাদা উপজেলার মল্লিকপুর, মোকামপুর, লস্করপুর ও পারহাজীগ্রাম, দিঘলিয়ার চন্দনিমহল ও কামারগাতি এলাকা এবং রূপসা উপজেলার শোলপুর, যুগিহাটী ও দেয়াড়া গ্রাম থেকে অন্তত হাজার দেড়েক জেলে ভৈরব ও আত্রাই নদীতে ইলিশ ধরেন। তাদের একটি অংশ নদীতে নৌকা-জাল নিয়ে নেমেছেন। অনেকে নৌকা-জাল মেরামত করছেন। চলতি আমাবশ্যার শেষে বড় গোনে বেশি ইলিশ ধরা পড়বে। এই সময়ে বেশিরভাগ জেলেই নদীতে ইলিশ শিকারে নামবেন বলে জানা গেছে।
রূপসা উপজেলার যুগিহাটী গ্রামের শেখ আবু তাহের (৪৮)। চার সদস্যের সংসার তার। তিনি একটি এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা লোন নিয়ে নৌকা-জাল কিনেছেন। তার নৌকা মেরামতের কাজ চলছে। আগামী দু’-এক দিনের মধ্যে তিনি নদীতে নৌকা নামাবেন। ইলিশ ধরে অভাবের সংসারে সুদিন ফিরবে বলে তিনি আশা করছেন।
জেলেরা বলেন, ৩শ থেকে ৫শ হাত লম্বা ছান্দি জাল কিনতে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অনেকে ১৮ হাত লম্বা সাংলে জাল এক হাজার টাকায় কিনেছেন। নৌকা তৈরিতে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পুরনো নৌকা সংস্কারে ব্যয় হচ্ছে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। অনেকেই ধার-দেনা করে অথবা সমিতি’র লোন নিয়ে জাল-নৌকা গড়েছেন। কেউ-কেউ বাজার দরের তুলনায় কম দামে মাছ বিক্রির শর্তে বেপারিদের কাছ থেকে দাদন নিয়েছেন।
সূত্রমতে, যত ছোট আকারের মাছই হোক, কারেন্ট জালের থেকে রেহাই নেই। অসাধু জেলেরা ছান্দি ও সাংলে জাল ব্যবহার না করে কারেন্ট জালে মাছ ধরেন। নগরীর বড় বাজার, তেরখাদার কোলার হাট, পার্শ্ববর্তী নড়াইল জেলার কালিয়া ও বটদিয়া এলাকার জাল বিক্রির দোকানে কারেন্ট জাল লুকানো থাকে। বিক্রেতারা জেলেদের কাছে তা গোপনে বিক্রি করেন। ১২-১৩শ’ টাকা কেজি দরে কারেন্ট জাল বিক্রি হয়। এরপর জাল বোনা কারিগরদের কেজি প্রতি দু’-তিন হাজার টাকা মজুরি দিয়ে তৈরি হয় জাটকা ইলিশের মরন ফাঁদ।
খুলনা সদর নৌ থানার ওসি অনিমেশ হালদারের নেতৃত্বে একটি টিম মঙ্গলবার সকালে ভৈরব নদে অভিযান চালিয়ে ২৮ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করেন। পরবর্তীতে ওই জাল রূপসা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সম্মতিতে নগরীর ৫ নং মাছ ঘাট এলাকায় আগুনে পুড়িয়ে ভষ্মিভ‚ত করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।