শেখ আব্দুল হামিদ : খুলনা শহরের প্রায় শতভাগ ফুটপাতই বিভিন্ন ভাবে দোকান মালিকরা দখল করে নিয়েছেন। এখন এই শহরে নিরাপদে হাটার জন্য এতটুকু জায়গা আর নেই। তাই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে প্রথচারিদের রাস্তা দিয়েই হাটতে হয়। আর সেখানেও রয়েছে হকারদের দখল। এভাবে প্রতিনিয়ত রাস্তার জায়গা দখল হলেও যেন দেখার কেউই নেই।
নগরীর বেশীর ভাগ এলাকায় ফুটপাত থেকে নামতেই রাস্তার পাশজুড়ে সারি সারি ইজিবাইক, বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল। কোথাও কোথাও গাড়ি পার্ক করা রয়েছে। আর এই শীত মৌসুমে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে বেড়েছে হকারদের ব্যবসার তৎপরতা। জায়গা পেলেই বিছিয়ে দেয় গরম কাপড়।
খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরীর আয়তন ৪৬ বর্গকিলোমিটার। পাকা সড়ক আছে ৬৪১ কিলোমিটার। ফুটপাতের সঠিক হিসাব না থাকলেও প্রায় ২৫ কিলোমিটার ফুটপাত দখল হয়ে আছে। সূত্রটি জানায়, বছরের বেশির ভাগ সময় করপোরেশনের নির্বাহী হাকিমের পদটি শূন্য থাকে। এ কারণে সড়ক ও ফুটপাত দখলের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো অনেকটা কঠিন। তারপরও মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু পরে ফুটপাত আবার দখল হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ফারাজীপাড়া মোড় এলাকায় ফুটপাথ দখল করে রেখেছে মাংস বিক্রেতারা। একই ভাবে পাওয়ার হাউস মোড় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার ফুটপাতের পুরোটাই রয়েছে হকারদের দখলে। সেখানে যেন পা ফেলার জো নেই। ফুটপাতজুড়ে দোকানের সারি। কোথাও কোথাও ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তার অর্ধেক পর্যন্ত চলে এসেছে দোকানপাট। খুলনা ওয়াসার সামনে ও পিকচার প্যালেস মোড়ের ফুটপাতে শীতবস্ত্রের দোকানের পাশাপাশি রয়েছে মাছ ও ফলের দোকান। ডাকবাংলা মোড়ে ভ্যানের উপর সারিদিয়ে বিক্রি করছে গরম কাপড়। ফুটপাতেও একই অবস্থা। গোটা ক্লেরোড জুড়ে হকারদের কেনাবোচার হিড়িক। তার মধ্য দিয়েই চলছে রিক্্রা, ইজিবাইক, মটোর সাইকেল আর মানুষ। সরেজমিনে আরও দেখা যায়, শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা পুরোনো যশোর রোডের খুলনা শপিং কমপ্লেক্সের বিপরীতে রাস্তার অর্ধেকজুড়ে সাইকেল সাজানো। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দেয়ালসংলগ্ন ফুটপাত ও জেলা আইনজীবী সমিতির সামনের ফুটপাতও কাপড়ের ব্যবসায়ীদের দখলে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দেয়াল সংলগ্ন কাপড় বিক্রেতা মো. জাহিদ বলেন, ‘এখানে শীতের সময়ে তিন মাস ব্যবসা করি। তারপর চলে যাব। ফুটপাত আটকে দোকান বসানো ঠিক না। কিন্তু আমাদের তো বাঁচতে হবে।’ এদিন ডাকবাংলো মোড়ের কথা হয় পথচারী আনোয়র হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, খুলনার ফুটপাত সারা বছরই দখল হয়ে থাকে। আগে বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা গেলেও এখন শীত ও ঈদ মৌসুমে ব্যবসায়ীরা রাস্তার মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে আসেন। এতে ভোগান্তির আর শেষ থাকে না।
রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার ফুটপাতের পুরোটাই দখল করে রেখেছেন কাঠের আসবাবের দোকানিরা। কলেজিয়েট স্কুলের পর থেকে টুটপাড়া কবরখানা মোড় পর্যন্ত ফুটপাতজুড়ে রয়েছে গাড়ি মেরামতের দোকান। রয়েলের মোড় থেকে ডাকবাংলো ফেরিঘাট পর্যন্ত ফুটপাত দখল করে আছে স্যানিটারিসামগ্রীর দোকান। রূপসা এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা মঈন খান বলেন, এখানকার ফুটপাত ধরে হাঁটা সম্ভব না। দিন দিন হাঁটার জায়গা কমছে। বিষয়টি চোখে যেন সয়ে গেছে তাই মেনে নিতে হয়। ময়লাপোতা মোড় থেকে গল্লামারী পর্যন্ত ফুটপাত লেপতোষক, খাবার ও ভাঙারির দোকানের দখলে আছে।
ময়লাপোতা মোড় থেকে গল্লামারী পর্যন্ত ফুটপাত লেপতোশক, খাবার ও ভাঙারির দোকানের দখলে। ময়পোতায় সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত সান্ধ্য বাজারের বাইরের অংশে অস্থায়ী দোকান বসায় সন্ধ্যার পর থেকে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সেখানকার এক পথচারী নাজমা সুলতানা বলেন, ‘সন্ধ্যায় গাড়ির চাপে আমাদের রাস্তার এপার থেকে ওপার যেতে ১৫-২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আর রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে তো বুক কাঁপে।’ সোনাডাঙা বাসস্ট্যান্ড থেকে বয়রা বাজার পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাতও নির্মাণসামগ্রীর দখলে রয়েছে। সেখানে এখন ইট, খোয়া, পাথর, বালু ও রডের সমাহার।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে খুলনা সিটি করপোরেশনের সম্পত্তিবিষয়ক (এস্টেট) কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, খুলনা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এক সময়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। সিটি করপোরেশনে অনেক সময়ে ম্যাজিষ্ট্রেট থাকেন না। সে জন্য অভিযান চালাতে সমস্যা দেখা দেয়। তবে দ্রুত আবার অভিযান চালান হবে।