২৪ ঘন্টায় প্রাণ গেল ১৭ জনের
ওষুধের দোকানে উপচে পড়া ভিড়
শেখ আব্দুল হামিদ
খুলনায় করোনা সংক্রমণের সাথে পাল্লাদিয়ে বাড়ছে অসচেতনতা। প্রতিদিনই সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সারি দীর্ঘ হলেও মানুষের মাঝে সচেতন হওয়ার কোন ইচ্ছা নেই। করোনার উপসর্গ গায়ে নিয়ে ওষুধের দোকানে ভিড় জমিয়ে ওষুধ কিনছে। পরীক্ষা করাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে নারাজ। গত ২৪ ঘন্টায় খুলনার দুটি হাসপাতালে ৮৫৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৯৭ জনের দেহে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। আর এসময়ে তিন হাসপাতালে আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনার গ্রাম-গঞ্জে বেড়েই চলেছে করোনার তিব্রতা। তারই সাথে মানুষ যেন পাল্লাদিয়ে অসচেতন হয়ে উঠছে। উপজেলা সদর এবং প্রত্যন্ত গ্রামে ওষুধের দোকানে জ্বর সর্দি কাশি নিয়ে মানুষ ভিড় জমিয়ে ওষুধ কিনছে। মঙ্গলবার বটিয়াঘাটা উপজেলা সদরের পাঁচটি ওষুধের দোকানে দেখা যায় কোন প্রকার স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই মানুষ ভিড় জমিয়েছে ওষুধ কিনতে। বিক্রেতাদের পক্ষ থেকেও কোন সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়নি। তাছাড়া কাঁচা বাজার কেনার সুযোগ পেয়ে মানুষ যেন সেই আগের মতই ঘরের বাইরে আসছে। একই চিত্র অন্যান্য উপজেলাতেও।
খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ফোকাল পার্সন ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ৭৯৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৫৯ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। এসময়ে মৃত্যু হয় মোট ৮ জনের। মৃতরা হলেন, খুলনার চানমারী এলাকার মমতাজ বেগম (৫৫), খালিশপুরের রহিমা পারভীন (৫৫), সোনাডাঙ্গার মনোয়ারা বেগম (৫০) ও বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার সুব্রত পাল (৪৫)। এ ছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়। ১৩০ বেডের এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন ১৮০ জন।
খুলনার বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘন্টায় ৬২টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৮ জনের দেহে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। ১৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি রয়েছেন ১৩৪ জন। হাসপাতালের স্বত্তাধিকারী ডা: গাজী মিজানুর রহমান জানান, ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, নগরীর বড় বয়রা এলাকার নোভা রানী দাশ (৭৫), খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার নজরুল ইসলাম (৬৮), পাইকগাছার কপিলমুনির শোভা রানী সাহা (৭৫) এবং বাগেরহাট সদরের মাহমুদা বেগম (৫৫)।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: কাজী আবু রাশেদ জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন, নগরীর খালিশপুরের জিল্লু মিয়া (৬৫), রহিম নগরের আমির হোসেন (৬৫), রূপসার নন্দনপুরের শরিফুল ইসলাম (৫২), বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার শারমিন বেগম (৪৫) ও একই উপজেলার মারিয়া (৩৯)। ৮০ শয্যার হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি আছেন ৭০ জন।
খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে কোন মৃত্যু হয়নি। ৪৫ শয্যার এ ইউনিটে রোগী ভর্তি আছেন ৪৫ জন।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে মানুষদের সচেতন করার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালান হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষ যেন পাল্লাদিয়ে অসচেতন হচ্ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় না রাখলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।