শেখ আব্দুল হামিদ
লোনা পানি প্রবেশে বাঁধা, জমি ভাড়ার মূল্য বৃদ্ধি, ভাইরাস আতংক, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে খুলনাঞ্চলে চিংড়ি চাষের পরিধি হ্রাস পেয়েছে। আমন ধান কাটা শেষ হতেই বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে চিংড়ি চাষিরা বাগদা ও গলদা চাষের জন্য ঘের প্রস্তুত শুরু করেন। ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয়, চিংড়ি ঘেরে ভাইরাসের আক্রমণ, বিদেশে মূল্য উদ্বেগজনক হারে হ্রাস, সহজশর্তে ঋণ প্রাপ্তির অভাবসহ বহু কারণে হতাশ হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের চিড়ি চাষিরা। সাতক্ষিরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন ঘেরে আশির দশক থেকে ব্যাপক হারে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। তখন এ অঞ্চলের কৃষকরা লবণ পানিতে ধান উৎপাদন করতে ব্যার্থ হতো। এ সময় তারা অভাবের তাড়নায় চিংড়ি চাষিদের নিকট কৃষি জমি নাম মাত্র অর্থে বন্ধক রাখতে বাধ্য হয়। কৃষকরা জমিতে নিজ খরচে চাষাবাদ করতেন। আমন ধান উঠলে উৎপাদিত ফসলের এক অংশ চিংড়ি চাষিরা নিতেন। নীলকরদের হাতে বন্দি হবার মতই এ অঞ্চলের কৃষকরা চিংড়ি চাষিদের হাতে বাধা পড়ে। এক শ্রেণির প্রভাবশালী চিংড়ি চাষি জমির মালিকদের উপর স্টিম রুলার চালাতে শুরু করে। বিভিন্ন কারণে কৃষকরা বিদ্রোহ হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন অধিদপ্তর বাঁধের কাজ শুরু করলে কৃষকরা সমবেত হয়ে লবণ পানি জমিতে তোলার বিরোধিতা শুরু করে। এ ভাবেই একদিকে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিপর্যয় অন্য দিকে মূল্য হ্রাসের কারণে বিদেশে রফতনির পরিমাণ অনেকটা কমে গেছে। খুলনা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলা দাকোপে বিত্তবানরা আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া বাঁধের মধ্যে লোনা পানি তুলতে বাধা এবং রোগ-বালাইয়ের কারণে ছোট ছোট ঘের গুলোর মধ্যে উৎপাদন এখন প্রায় বন্ধ রয়েছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে খুলনার নয় উপজেলায় ১৪ হাজার ৫৫৭ মেট্রিকটন গলদা এবং ১১ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়। পরে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সে স্থানে গলদা চিংড়ির উৎপাদন হয় ১৩ হাজার ৪৬৭ মেট্রিক টন এবং বাগদা চিংড়ির উৎপাদন হয় ১২ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন। যে সব দেশে এসব চিংড়ি রফতানি হয় তার মধ্যে রয়েছে নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, রাশিয়া, ডেনমার্ক, সাইপ্রাস, অষ্ট্রিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মান, পর্তুগাল, গ্রিস, সুইজারল্যান্ড, লিথুনিয়া, স্পেন ও পোলান্ড।
খুলনা বিভাগীয় মৎস্য দপ্তরের উপ-পরিচালক তোফাজ উদ্দিন আহমেদ দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ইউকেতে গলদা চিংড়ির চাহিদা কমে গেছে। গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের পাঁচ মাসে ১১শ মেট্রিক টন কম হিমায়িত চিংড়ি রফতানি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী গলদার দাম অনেকটা কমেছে। ইউকের বাজারে অন্যান্য বছরে এক কেজি হিমায়িত চিংড়ি ১৫-১৬ ডলার দামে বিক্রি হলেও এখন তার মূল্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। সে জায়গার মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও কমে গেছে। গলদা চিংড়ির দাম কমে যাওয়ায় স্থানীয় চাষিরা ডিপোতে বিক্রি না করে হাটে-বাজারে চিংড়ি বিক্রি করছে। সব মিলিয়ে খুলনাঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা এখন অনেকটা হতাশায় আছেন।
খুলনায় চিংড়ি চাষের পরিধি কমেছে হ্রাস পেয়েছে রফতানি
Leave a comment