শেখ আব্দুল হামিদ
অতিরিক্ত গরমে খুলনায় ডায়রিয়া, জ্বর, শর্দি-কাশি এবং নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে ২২৪ জন রোগী খুলনা শিশু হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছে। গত মাসে বহি:র্বিভাগে ৭৯ হাজার ৯ জন এবং আন্ত:বিভাগে ১ হাজার ২৬৯ জন শিশু চিকিৎসা নেয়। এছাড়াা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডসহ অন্যান্য সরকারি ও সেসরকারি হাসপাতালেও ডায়রিয়া, জ্বর, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে।
পদ্মার এ পারে একমাত্র বিশেষায়িত খুলনা শিশু হাসপাতাল গত ২৩ বছরেও পূর্ণতা পায়নি। এখানে নেই নিউরোলজি বিভাগ, কার্ডিওলজি বিভাগ, নবজাতক সেবা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন উন্নত মানের চিকিৎসা ব্যবস্থা। জনবল সংকট, বেড সংকট, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সংকট, ইনকিউবেটর কক্ষ সংটক নিয়ে প্রতিনিয়ত সমস্যায় থাকেন তত্বাবধায়ক। সেবার মান ভালো থাকায় এখানে ভিড় জমায় বৃহত্তর খুলনার বিভিন্ন জেলা উপজেলার শিশু রোগী। আন্তরিক চিকিৎসা সেবায় অনেক মৃত্যুপথ যাত্রী শিশুও নবজীবন লাভ করে ঘরে ফিরে যায়। বিভিন্ন সময়ে শিশুর ভিড়ে বেড সংকটের কারণে কর্তৃপক্ষ ভর্তি বন্ধ করে প্রধান ফটকে বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেন। নতুন ভবনের জন্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্ধ হলেও এখনও পূর্ণতা পায়নি।
১৯৮০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে খুলনা শিশু হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। তার পর থেকে দিনের পর দিন শিশু ভর্তির হার বেড়েই চলেছে। এখানে বেড সংখ্যা রয়েছে মাত্র ২৭২টি। প্রতিদিন ৫০-৬০ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়। বেড সংকটের কারণে অনেক শিশুকে সিরিয়ালে থাকতে হয়। এ সময় তারা অন্য কোন চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি
থাকে। শিশু হাসপাতালে সিট পেলেই এসে ভর্তি হয়। গত ৬ মাসে এখানে ১১ হাজার শিশু ভর্তি হয়। এ সময়ের মধ্যে বহি:বিভাগে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে ১ লাখ ৩১ হাজার ২৮০ জন শিশু।
শিশু হাসপাতাল সূত্র থেকে বলা হয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলে গেল বছর শীত মৌসুমে নিউমোনিয়া, সেপটিসেনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুরা চিকিৎসা নিতে শহরের হাসপাতালে আসে। ২০২০ সালে ১৭ হাজার শিশু এসব রোগে আক্রান্ত হয়। এ সময় মৃত্যু হয় ৬৮০ জনের। তখন শৈত্যপ্রবাহের মধ্যদিয়ে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে আড়াইশ’ রোগী খুলনা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।
গত বছর ডিসেম্বরে একদফা এবং জানুয়ারির শুরুতেই শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও খুলনার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে খুলনা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়। সূত্রমতে, গত বছরের শেষ চার মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৩৭০ শিশু নিউমোনিয়া ছাড়াও ডায়রিয়া, জন্ডিস, কফ এন্ড কোল্ড, ফেনিনজাইটিস, নিউমোনাইটিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। এ মাসেই মারা যায় ২৭ শিশু।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশু হাসপাতালে বর্তমানে ৩৮টি কেবিন এবং অন্যান্য জরুরী চিকিৎসা বিভাগ ও ওয়ার্ড নিয়ে মোট ২৭২টি বেড রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই শতাধিক শিশু রোগী এখানে চিকিৎসাধীন থাকে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রোগীর চাপ বেশি হয়। প্রতিদিন এখন বহি:বিভাগে ৫০০ থেকে ৬০০ জন রোগী চিকিৎসা নেয়। এখানে মোট জনবল রয়েছে ২৮০ জন। তার মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ৩ জন, কনসালট্যান্ট ৭ জন, সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ১৫ জন, মেডিকেল অফিসার ২৭ জন ও ডেন্টাল সার্জন ১ জন।
সার্বিক বিষয়ে খুলনা শিশু হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. মো. কামরুজ্জামান দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালে রোগীর চাপ কিছুটা বেশি। কেবিন বা বেড খালি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবার পূরণ হয়ে যায়। ফলে সামাল দিতে বেগ পেতে হয়। যে কারণে সিরিয়াল দিতে মাঝে মাঝে বিজ্ঞপ্তি টানানো হয়। তারপরও সকল রোগীকেই সব ধরণের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি বলেন, ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দে নির্মাণাধিন ভবনটি চালু করা গেলে তখন এ সমস্যা আশাকরি থাকবে না। তিনি শিশুর মা’দের উদ্দেশ্যে বলেন, এ সময়ে শিশুদের প্রতি যতœশিল হতে হবে। হঠাৎ ঠান্ডা এবং হঠাৎ গরম লাগলে শিশু অসুস্থ হতে পারে।
খুলনায় ডায়রিয়া, জ্বর, শর্দি-কাশি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে
Leave a comment