# পাঁচ উপজেলায় কর্মকর্তা নেই
শেখ আব্দুল হামিদ
জেলায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ঝিমিয়ে পড়েছে। গত দশ বছর ধরে দুটি সূচকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং মোট প্রজনন হার অর্থাৎ নারীপ্রীতি সন্তান জন্মদান একই স্থানে আটকে রয়েছে। খুলনা জেলায় প্রজনন হার অন্যান্য জেলার চেয়ে কম হলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি থেমে নেই। জেলার নয় উপজেলায় জনবলের অভাব রয়েছে যথেষ্ঠ। দাকোপ, তেরখাদা, কয়রা, রূপসা এবং ডুমুরিয়া উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নেই। তাছাড়া প্রতি উপজেলাতেই অন্যান্য পদে ৭-৮ জন করে কর্মচারী শুন্য রয়েছেন।
২০১১ সালের পর থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং মোট প্রজনন হার এই দুই সূচকের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি আসেনি। বিশেষজ্ঞরা এর জন্য কর্মসূচি-সংল্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অব্যবস্থাপনা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবকেই দায়ী করছেন। তবে কর্মকর্তারা মনে করেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রজনন হার কমানো না গেলেও বাড়তে না দেওয়াই বড় সফলতা। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারে নারীরা যতটা আগ্রহী সে তুলনায় পুরুষরা আগ্রহী নয়।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের দেয়া তথ্য মতে, জেলায় মোট দম্পতি রয়েছেন ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৮৭২ জন। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮০০ জন দম্পতি। ইন্ট্রা ইউটেরাইন ডিভাইস (আইইউডি) বা কপার্টি ব্যবহারকারী নারীর সংখ্যা ১৩ হাজার ১৮৭ জন, খাবার বড়ি ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮২৭ জন, ইমপ্যান্ট ব্যবহার করেন ১ হাজার ১৮৭ জন, টিউবেকটমি (বন্ধ্যাকরণ) ১৫৯ জন এবং ইনজেকশন ব্যবহার করেন ৬৯ হাজার ১৭৭ জন। পুরুষদের মধ্যে কনডম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৬ হাজার ৪৬৫ জন এবং নো স্কাপেল ভেসেকটমি (এনএসভি, বন্ধ্যাকরণ) সংখ্যা মাত্র ৭০ জন।
জেলায় স্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩১৫ জন। অর্জন হয় ১৭২, ব্যবহারের হার ৫৪.৬০। দীর্ঘস্থায়ী পদ্ধতি আইইউডি এর লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয় ৪১৭, অর্জন হয়েছে ৪১৬ হার দেখান হয়েছে ৯৯.৭৬। ইমপ্লান্ট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৮৩৪, অর্জন হয়েছে ৭০৪ ব্যবহারের হার ৮৪.৪১।
এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বটিয়াঘাটা উপজেলার কিসমত ফুলতলা গ্রামে সিরাজুল ইসলাম ৫ সন্তানের জনক। তিনি জানান, তার বিয়ের বয়স ২৬ বছর। পেশায় একজন দিন মজুর। সারা দিন পরিশ্রমের পর ঘরে এসে স্ত্রীর মধ্যেই আনন্দো খুঁজে পায়। তার স্ত্রীও সারা দিন রাজমিস্ত্রীর সঙ্গে শ্রম দেয়। পরিবার পরিকল্পনার কর্মীদের সাথে তাদের দেখা মেলে না। তাই কোন পদ্ধতিই তারা ব্যবহার করে না। তিনি বলেন, রাস্তার পাশে সরকারী জায়গায় বসবাসকারী অধিকাংশ জনই কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে না। তাছাড়া ছেলে মেয়ে বেশী থাকলে এনজিও থেকে অনেক সাহায্য পাওয়া যায়।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের হিসাব মতে, ১৯৭৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর পদ্ধতি ব্যবহারকারী গড়ে মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার গত ৪৬ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে আট গুণ। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র মানুষগুলোর কাছে এসব সামগ্রী পৌঁছায় না। আবার অনেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারের কৌশল সম্পর্কে এখনো অজ্ঞ। লজ্জার কারণে এসব নিয়ে জানতেও চান না। এসবের সামগ্রিক ফল হিসেবেই জন্মনিয়ন্ত্রণে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর জানায়, পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার সন্তোষজনক হারে বাড়েনি। অপূর্ণ চাহিদার ক্ষেত্রে একটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী বিবাহিত নারীদের মধ্যেই চাহিদার হার সবচেয়ে বেশি। এ হার ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এই বয়সীদের মধ্যে মাত্র ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করছে।
এ ব্যাপারে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো: আনোয়ারুল আজিম বলেন, মাতৃমৃত্যু এবং শিশু মৃত্যু রোধে আমাদের অবস্থান সন্তোষজনক। জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে আমাদের লক্ষ্য ৮০ শতাংশ। কিন্তু আমাদের অবস্থান বর্তমানে ৭০ দশমিক ৫। ১০ শতাংশ চাহিদা থাকলেও এখনো বিভিন্ন কারণে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এই লক্ষ্য পূরণে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের জেলায় মাছ কোম্পানী গুলোতে কর্মজীবী নারীদের সংখ্যা বেশি। তাই তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালু করতে ব্যবস্থা গ্রহণের কর্মসূচি চালুর চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, নয় উপজেলার পাঁচ উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নেই।
খুলনায় পরিবার পরিকল্পনা আটকে আছে দুটি সূচকে
Leave a comment