ইয়াসীন আরাফাত রুমী
খুলনা মহানগরীতে ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের প্রতিদিনের ব্যবহারযোগ্য পানির গড় চাহিদা প্রায় ২৪ কোটি লিটার। যা পূরণে বর্তমানে খুলনা ওয়াসা নগরীতে দৈনিক প্রায় ২১ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছে, যা নগরবাসীর মোট চাহিদার ৮৮ শতাংশ। পানির চাহিদা মেটাতে ভ‚-গর্ভস্থ ১১ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করে সরবরাহে সক্ষম খুলনা ওয়াসা। বাকি পানির সংকট অনেকটাই নিরসন করছে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী, যা চাহিদার প্রায় ৫৩ শতাংশ।
উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এডিবি, জাইকা ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে ‘খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প’র আওতায় একটি টেকসই পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে খুলনা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথরিটি (কেওয়াসা)।
খুলনায় সুপেয় পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে কমছে ভ‚গর্ভস্থ পানি। তাই ভ‚-পৃষ্ঠের পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে মধুমতির পানি এনে পরিশোধন করা হচ্ছে রূপসার সামন্তসেনায়। সেই পানি সরবরাহ হচ্ছে পাইপলাইনের মাধ্যমে। এতে শহরের ৬৫ শতাংশ বাড়িতে পৌঁছাচ্ছে পান উপযোগী বিশুদ্ধ পানি।
খুলনা ওয়াসা জানায়, বর্তমানে নগরীর ১৫ লাখ মানুষের প্রতিদিন গড় পানির চাহিদা ২৪ কোটি লিটার। এ চাহিদা পূরণে খুলনা ওয়াসা ভ‚-গর্ভস্থ স্তর থেকে উত্তোলিত মাত্র ১১ কোটি লিটার পানি সরবরাহে সক্ষম। এর মধ্যে ছয় কোটি লিটার গভীর নলক‚প ও পাঁচ কোটি লিটার পানি চাপকলের মাধ্যমে উত্তোলন এবং সরবরাহ হয়। এটি মোট চাহিদার মাত্র ৪৫ শতাংশ। লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও শিল্পবর্জ্যের আধিক্যের কারণে ভৈরব এবং রূপসার পানি পরিশোধন উপযোগী নয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে শহরের ১৫ লাখ মানুষের মধ্যে ১১ লাখ মানুষই এখন সুপেয় পানি পাচ্ছে।
খুলনা ওয়াসা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ্, পি.ইঞ্জ বলেন, একসময় খুলনাবাসী সুপেয় পানির কষ্টে ছিল। কিন্তু খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সে কষ্ট দূর হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে শহরে মাত্র ১৩ হাজার হোল্ডিংয়ে পানি সরবরাহ করা হতো। এখন ৪০ হাজার হোল্ডিংয়ে মধুমতি নদীর পানি সংশোধন করে সরবরাহ করা হচ্ছে।
২০১১ সালের ২১ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প’ অনুমোদন পায়। এর মধ্যে জাইকার ঋণ এক হাজার ১২৬ কোটি এবং এডিবির ৫২১ কোটি টাকা। বাকি টাকা বহন করেছে সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে খুলনা শহরে ১১ কোটি লিটার পানি সরবরাহ বেড়ে যায়। সে হিসাবে দৈনিক খুলনা ওয়াসা নগরীতে প্রায় ২১ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছে, যা নগরবাসীর মোট চাহিদার ৮৮ শতাংশ। মধুমতি মেটাচ্ছে প্রায় ৫৩ শতাংশ চাহিদা।
এ প্রকল্পের আওতায় খুলনা শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মধুমতি নদী থেকে পানি সংগ্রহের পর তা পরিশোধনের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনে সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুরো প্রকল্পের আওতায় মধুমতি নদী থেকে ৩৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট পাইপের মাধ্যমে অপরিশোধিত পানি সামন্তসেনা এলাকায় পরিশোধন করা হচ্ছে। সেখানে গড়ে দৈনিক ১১ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি শোধনাগারের পাশাপাশি অপরিশোধিত পানি সংরক্ষণের জন্য ৭ লাখ ৭৫ হাজার কিউবিক মিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি জলাধার নির্মাণ করা হয়। এতে নগরবাসীর জন্য তিন মাসের পানি মজুত থাকবে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে ১১টি উচ্চ জলাধার, সাতটি আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার, পরিশোধন হওয়া পানি নগরীতে সরবরাহের জন্য ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও বিভিন্ন ব্যাসার্ধের ৭৫০ কিলোমিটার পানির সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণ এবং মিটারসহ ৭৫ হাজার গৃহসংযোগ দেওয়া হয়। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৯ সালের জুন মাসে।
এবিষয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, যেহেতু খুলনা একটি লবণাক্ত পানির অঞ্চল, ফলে এখানে পর্যাপ্ত নিরাপদ ও সুপেয় পানি ছিল না। গভীর নলক‚পই ছিল বিশুদ্ধ পানির একমাত্র উৎস। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও নগরবাসী পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি পাচ্ছেন না।
‘খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প’ প্রসঙ্গে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং বলেন, শহরকে বসবাস উপযোগী করতে মৌলিক অবকাঠামো হলো নিরাপদ পানি সরবরাহ। আমরা খুলনা শহরে পানিবণ্টন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি একটি জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করছি।
খুলনায় পানির চাহিদা মেটাচ্ছে মধুমতি নদী
Leave a comment