ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর
কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরী
শেখ আব্দুল হামিদ : ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পার হতে গেলেও খুলনা জেলার প্রায় ৭০ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। অথচ ২১ শে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। জেলায় মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ হাজার ১৫৯টি। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ৭শ’ প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আজও শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে পারে না। তাদের মধ্যে অনেকের ইচ্ছা থাকলেও শহীদ মিনার না থাকায় দিনটি ছুটি হিসেবেই কাটিয়ে দেয়। এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও একই ভাবে ছুটিতে অন্য কোথাও চলে যান বেড়াতে।
খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিভিন্ন সমস্যার কারণে খুলনা জেলার প্রায় ৬০ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। যে কারণে তারা দিবসটি পালন করতে পারে না। বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার করার মত জায়গা নেই। তাছাড়া উপজেলা পর্যায় থেকে তেমন কোন পদক্ষেপও নেয়া হয় না।
জেলার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে সেখানে ফুল দিতে দেখা যায়। কেউ বা রাস্তার পাশে ছোট করে শহীদ মিনার তৈরী করে ভোরের শিশির নগ্ন পায়ে মাড়িয়ে সেখানে ফুল হাতে ছুটে যায়। হাজারও ইচ্ছা থাকলেও তারা শহীদ মিনার না পেয়ে বসন্তের কুয়াশা ভেজা ভোরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভুল করে না।
খুলনার তেরখাদা উপজেলায় ১০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭টি মাদ্রাসা, ৯টি কলেজের মধ্যে মাত্র ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। কোন মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নেই। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার কি তা আজও জানেনা। তারা মনে করে ২১শে ফেব্রুয়ারি একটি ছুটির দিন।
বটিয়াঘাটা উপজেলায় ১১৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে ৯৫টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। এ সব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহীদ দিবস পালন করে না। তারা দিবসটিতে ছুটি কাটায় বিভিন্ন খেলাধুলার মাধ্যমে। বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলমগীর কবির বলেন, ৯৫টি স্কুলে শহীদ মিনার না থাকলেও সেসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে ফুল দেয়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনা সভা করে থাকেন।
খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম বলেন, জেলায় মোট ১,১৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ স্কুলে শহীদ মিনার নেই। প্রতিটি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে দিবসটি যথাযথ ভাবে পালনের জন্য। তবে শিক্ষা দপ্তর থেকে শহীদ মিনার তৈরীর জন্য কোন বরাদ্দ দেয়া হয় না। যে স্কুল গুলোতে শহীদ মিনার আছে, তারা নিজেদের উদ্যোগে তৈরী করে নিয়েছেন।