বিভাগে মোট আক্রান্ত ৫৯২ জন
শেখ আব্দুল হামিদ
করোনার প্রভাব কমে আসার পরই খুলনা বিভাগে মরণব্যাধি এইচআইভি এইডসের ভয়াবহতা নিরবে বেড়েই চলেছে। চলতি বছর আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫ জন। এ মাসেই ৮ সেপ্টেম্বর খুমেক হাসপাতালে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে মাসে রোগী প্রতি ২০ হাজার টাকার ওষুধ ফ্রি দেয়া হচ্ছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) অধীনে বাড়ি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন মোট ৫৯২ জন রোগী। মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার অধিনে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন বহু রোগী। খুলনার পরেই যশোরের অবস্থান।
বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে এখন বৈধ অবৈধ পথে মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশে যাতায়াত করছে। এ সুযোগে বেড়েই চলেছে মরণব্যাধি এইচআইভি এইডস’র ভয়াবহতা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার লুনা নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি ইউনিসেফের আওতায় এইচআইভি এইডস নিয়ে কাজ করতেন। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালে মৃত্যু হয় ২৭ জনের। তার পর করোনার ব্যাপকতায় মানুষের চলাফেরা সীমিত হলে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসে। বর্তমানে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা উর্ধমুখি রয়েছে। বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলাতেই এইডস রোগীর সংখ্যা বেশী। প্রতি মাসে গড়ে শনাক্ত হচ্ছে ৭ জন রোগী।
খুমেক হাসপাতালের একমাত্র মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট সেলিমুজ্জামান জানান, এইডস রোগের জীবাণু বহনকারী রোগীরা লজ্জায় পরীক্ষা করাতে কম আসে। তাই শনাক্তের সংখ্যা কম বলে মনে হয়। তবে তাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে এ রোগ। তিনি বলেন, হাসপাতালে যে কোন রোগী ওটিতে নেয়ার আগে তার এইডস আছে কিনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ডাক্তারদের ব্যবস্থা পত্রে এইচআইভি টেস্টের নির্দেশ থাকলে রোগীরা পরীক্ষা করাতে বাধ্য হবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি ওয়ার্ডে টেস্ট নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে এ রোগের সঠিক চিত্র ধরা পড়বে। খুলনা এবং যশোরে একই পরিবারে একাধিক এইডস আক্রান্ত রোগী রয়েছে। স্বামীর থেকে স্ত্রী আক্রান্ত হয়। পরে স্ত্রীর গর্ভের সন্তানও আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া পতিতা এবং হিজলাদের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এইডস রোগীদের শতকরা ৩০ ভাগ যক্ষা রোগে আক্রান্ত। এছাড়া আরও বহুরোগের জন্ম হয় এইডস থেকে।
সূত্রটি জানায়, গত ২০১৭ সালে সরকার এইডস রোগীদের চিকিৎসা সেবা হাতে নেয়ার পর এবছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১১ মাসে পজেটিভ ধরা পড়ে ৪১ জনের দেহে। ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১২ মাসে আক্রান্ত হয় ৫১ জন। ২০১৯ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ২৯ জনের, ২০২১ সাল থেকে ২০২২ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ২০ মাসে ৪৭১ জনের দেহে এইডস রোগের জীবাণু পাওয়া গেছে। এর পূর্ব পর্যন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিষ্টারে রয়েছে ২২৪ জন এইডস রোগীর নাম। ফলে ৫৯২ জন রোগীকে ওষুধ দেয়া হচ্ছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এইডস আক্রান্তদের মধ্যে খুলনা মহানগরী এলাকার বাসিন্দা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার মানুষ রয়েছেন। এর মধ্যে খুলনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যাই বেশি। আক্রান্তদের বর্তমানে খুলনাসহ ১০ জেলায় এআরটি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এইডস/এসটিডি কর্মসূচি এবং ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ‘গর্ভবতী মায়ের থেকে শিশুর যাতে এইচআইভি না ছড়ায়’ সে কর্মসূচি বাস্তায়িত হচ্ছে।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান দৈনিক জন্মভ‚মিকে বলেন, এইচআইভি/এইডস রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি ছাড়া কোনো উপায় নেই। এই বিষয়ে মানুষের নিজের উদ্যোগে সচেতন হতে হবে। এইডস রোগী শনাক্তের জন্য নতুন ভবনে আলাদা পরীক্ষাগার রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
খুলনা বিভাগে বাড়ছে এইডস রোগী
Leave a comment