ওভারলোডিং ও যানবাহনের চাপে অনেক স্থানে পিচ দেবে বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে
গাজী জাহিদুর রহমান,তালা : খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে তালা উপজেলার সুভাষিনী বাজার থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ৩৩ কিলোমিটার রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থানে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে উঠেছে নানা অভিযোগ। মাত্র সাড়ে ৪ বছর আগে ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণ হয়। মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের কাজ সম্পন্ন করেন। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর সাতক্ষীরা-খুলনা সড়কে যানবাহন চলাচল বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে কয়েক কিলোমিটার সড়কের বিটুমিন উঠে অনেক স্থানে খানা-খন্দে পরিণত হয়েছে। সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। গত দুইদিনও বিআরটিসি বাসসহ একাধিক পরিবহন দুঘর্টনার কবলে পড়ে। অনেকেই বলেন, ওভারলোডিং ও যানবাহনের চাপে এ মহাসড়কে বিভিন্ন স্থানে পিচ দেবে বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে ৬ কিঃ মিঃ সড়কে কাজের জন্য টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া জিরোপয়েন্ট থেকে কিছু অংশে ঢালাই কাজ করার জন্যও টেন্ডার হয়েছে।
সূত্রমতে, খুলনা অংশের কাজ শেষ হয় ২০২০ সালে এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার দায়ভার শেষ হয় ২০২৩ সালে। প্রকল্পের প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয় তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী তাপসী দাসের সময়ে। তিনি এখন গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিল পরিশোধ করেন।
পথচারী বেলাল হোসেন, হেলেনা খাতুন, নাজমুল হোসেন, রাজীব সরদারসহ কয়েকজন জানান, অত্র সড়কের কয়েকটি স্থান বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। সেসব জায়গা দিয়ে মটর সাইকেল, বাস কিংবা ভ্যানে যেতেও রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে। ওভারলোডিং ও যানবাহনের চাপে এ মহাসড়কে বিভিন্ন স্থানে পিচ দেবে বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানান তারা। এ সময় তারা আক্ষেপ করে বলেন, এ সড়কটি মাত্র কিছুদিন হলো তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই কেন এ অবস্থা তৈরি হবে!
বাস চালক নজরুল ইসলাম জানান, ‘কিছুদিন পরপর এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়ি উল্টে যায়। মূলত সড়কটির এ অবস্থার কারণেই দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। সড়কে আগের থেকে অনেক বেশি জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় আছে। মাঝেমধ্যে পাথর বসিয়ে ঠিক করা হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়।’
ভোমরা স্থলবন্দর থেকে পাথর নিয়ে এ সড়ক দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন চালক মোঃ মহিবুল ইসলাম। তালার সুভাষিনী বাজারে কথা হয় তার সাথে। এ সময় তিনি বলেন, ‘সড়কটিতে যান বাহনের চাপ বেড়েছে এটা ঠিক। আগে আমরা অন্য সড়ক ব্যবহার করলেও পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এ সড়ক দিয়ে পণ্য নিয়ে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য স্থানে যেতে সুবিধা হয়। তবে সড়কটি আগের অবস্থাতেই রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে গর্ত হওয়ায় ট্রাক উল্টে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।’
খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্বে) মোঃ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন অতিভারী যানবাহন চলার কারণে সড়কের কিছু কিছু অংশে বৃষ্টিতে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবে দ্রুত সংস্কারের জন্য ব্যবস্থা চলছে।’
খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী বর্তমানে খুলনা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আনিছুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘২০২২ সালের ২৫শে জুন পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর খুলনা-চুকনগর সাতক্ষীরা সড়কে যানবাহনের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাছাড়া সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরের ভারি যানবাহন চলাচলও বেড়ে গেছে। এসব কারণে সড়কের তিনটি স্থান জিরেপয়েন্ট থেকে নিজখামার, গুটুদিয়া এবং চুকনগর এলাকা মিলে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, চলতি বছর ১৯ মে ৩০ কোটি টাকার একটি টেন্ডার হয়েছে। এর মাধ্যমে দু’টি বাঁক সরলীকরণসহ শক্ত ঢালাইয়ের কাজ করা হবে। ফলে কাজটি শেষ হলে যান চলাচলে আর ভোগান্তি থাকবে না।’