জন্মভূমি ডেস্ক : গত এক বছরে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮ হাজার ৪৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ।
আজ শনিবার (০৭ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। ২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন তুলে ধরার জন্য এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
ড. মাহবুব বলেন, দেশে যথেষ্ট উন্নত সড়ক অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। ফলে নানা প্রকারের যানবাহন যেমন বেড়েছে, তেমনি যানবাহনের গতিও বেড়েছে। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাব বা প্রযুক্তি ব্যবহারে অনিচ্ছার কারণে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য ১৮ হাজার ৪৬ কোটি টাকার মতো। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সেজন্য এই হিসাবের সাথে আরও ৩০ ভাগ যোগ করতে হবে।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহন বা প্রপার্টি ড্যামেজ হয়েছে তার তথ্য না পাওয়ার কারণে প্রপার্টি ড্যামেজের আর্থিক পরিমাপ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে গণমাধ্যমে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, প্রকৃত ঘটনা তার চেয়ে ৩/৪ ভাগ বেশি। এই বিবেচনায় এবছর সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আমাদের জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হতে পারে বলেও মনে করেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ হাজার ৮২৯টি। নিহত ৭ হাজার ৭১৩ জন এবং আহত ১২ হাজার ৬১৫ জন। নিহতের মধ্যে নারী ১ হাজার ৬১, শিশু ১ হাজার ১৪৩। ২ হাজার ৯৭৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৩ হাজার ৯১ জন। যা মোট নিহতের ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৬২৭ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২১ দশমিক ৯ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৬৪৮ জন, অর্থাৎ ২১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
এই সময়ে ১৯৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৩১৯ জন নিহত, ৭৩ জন আহত এবং ৯২ জন নিখোঁজ রয়েছে। ৩৫৪ টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩২৬ জন নিহত এবং ১১৩ জন আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ৩ হাজার ৯১ জন, বাস যাত্রী ৪২৭ জন, ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি আরোহী ৪৫৩ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-জীপ যাত্রী ২৬৮ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি- অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক টেম্পু-লেগুনা) ১২৪৮ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন- ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-চালের গাড়ি-বোরাক-মাহিন্দ্র-টমটম) যাত্রী ৩৯৩ জন এবং বাইসাইকেল-প্যান্ডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ২০৬ জন নিহত হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২৫৯৬টি জাতীয় মহাসড়কে, ২২০৫টি আঞ্চলিক সড়কে, ১১৮২টি গ্রামীণ সড়কে, ৭৮৪টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬২টি সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনাসমূহের ১ হাজার ৩৩১টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৮৯২টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৬৪৮টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৭৮৫টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৭৩টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।