ইয়াসীন আরাফাত রুমী
গৃহস্থলী বর্জ্য বর্জ্যকে শক্তিতে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। খুলনা মহানগরীতে প্রতিদিনের উৎপাদিত গৃহস্থলীর বর্জ্য থেকে ডিজেল, কমপোস্ট সার ও বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে খুলনা সিটি করপোরেশন। এডিবির অর্থায়নে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কেসিসি। আগামী ৩ বছরের মধ্যে উৎপাদনে আসবে বর্জ্য শোধনাগারটি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এই মডেল দেশে এটাই প্রথম এমনটাই দাবি করছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)।
জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ২০০ টন বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থলী বর্জ্য উৎপাদিত হয় খুলনা মহানগরীতে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭০০-৮০০ মেট্রিক টন বর্জ্য সংগ্রহ করে কেসিসি। বাকি বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে নগরীর ড্রেনসহ যত্রতত্র। সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ এই বর্জ্যকে শক্তিতে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন। পরিকল্পনা অনুযায়ি বাস্তবায়নাধিন প্রকল্পে আধুনিক পদ্ধতিতে যন্ত্রের সাহায্যে পচনশীল ও প্লাস্টিক বর্জ্য আলাদা করা হবে। পচনশীল বর্জ্য দিয়ে প্রতিদিন উৎপাদন করা হবে ১৫টন জৈবসার। আর বায়োগ্যাসের মাধ্যমে প্লান্ট থেকে উৎপাদিত হবে বিদ্যুৎ, পাশাপাশি প্লাস্টিক পণ্য রিসাইক্লিং করে উৎপাদন করা হবে ডিজেল।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, প্রকল্পটি শেষ হলে আমরা পচনশীল বর্জ্য দিয়ে জৈব সার তৈরি করতে পারবো। এখান থেকে প্রায় ৩০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে যা এই প্রকল্পে বিদ্যুতের চাহিদা পুরণ করবে। এছাড়া এখান থেকে প্রতিদিন ৫ হাজার লিটার ডিজেল উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন কেসিসির এই কর্মকর্তা।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন, এই প্রকল্প নিয়ে প্রাথমিক সমীক্ষা শেষ হয়েছে। প্রকল্পের জন্য প্রথম পর্যায়ে ডুমুরিয়া উপজেলার শলুয়ায় ৪৪ একর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই জমি অধিগ্রহনের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ২ মাসের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ শেষ করে চলতি বছরেই প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য দরপত্র আহবান করা হবে বলে জানান মেয়র।
প্রকল্পটির মাধ্যমে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কতটা হবে সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন বেলা’র খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, এটি একটি মেগা প্রকল্প। তবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বর্জ সংগ্রহ না করে সেকেন্ডারি ডাম্পিং পয়েন্ট থেকে পাওয়া বর্জ্যরে ওপর নির্ভর করে এ প্রকল্পের নকশা করা হয়েছে। সেকেন্ডারি ডাম্পিং পয়েন্ট থেকে নগরীর মাত্র ৩০-৪০শতাশং বর্জ্য এই প্রকল্পের আওতায় থাকবে। বাকি ৬০-৭০ শতাংশ বর্জ্য যত্রতত্রই পড়ে থাকবে। ফলে এসব বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও ১৭ লাখ মানুষের বসতি এই নগরীতে বর্জ দূষণ থেকেই যাবে।
এডিবির অর্থায়নে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাসা বাড়ীর বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্পটি থেকে কম্পোস্টসার, বায়োগ্যাস ও ডিজেল পাওয়া যাবে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর দূষণ কমার পাশাপাশি কেসিসির অভ্যন্তরিন আয় বাড়বে।