জন্মভূমি রিপোর্ট : গোপালগঞ্জে বিএনপির নেতা–কর্মীদের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদার (৪৮) নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এসএম জিলানীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। ভাঙচুর করা হয় ১০টি গাড়ি । গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিচুর রহমান নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আজ শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহতদেরকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের বেগগ্রাম এলাকায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিক উজ্জামানের সভাপতিত্বে পথসভা শেষ করে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এসএম জিলানী, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক তৌহিদুর রহমান তাজসহ কেন্দ্রীয় নেতারা গাড়িবহর নিয়ে সেখান থেকে রওনা হন টুঙ্গীপাড়ায় জনসভার উদ্দেশে।
পথে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঘোনাপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে একদল জনতা লাঠি নিয়ে তাদের বাধা দেয়। পরে গাড়িবহরের বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নেমে বাধাদানকারীদের ধাওয়া দেয়।
এক পর্যায়ে স্থানীয় দোকান মালিকসহ সাধারণ জনগণ তাদেরকে লাঠিসোঁটা ও ইট-পাটকেল নিয়ে পাল্টা ধাওয়া করে। এসময় তারা বিএনপি নেতাদের গাড়িবহরে হামলা করে এবং অন্তত ১৫টি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে এবং বিএনপির নেতাদেরসহ গাড়িবহরের স্থানীয় নেতাকর্মীদেরকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে।
এক পর্যায়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি। টানা ঝড়বৃষ্টির কারণে এক পর্যায়ে সংঘর্ষ থেমে যায়। পরে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দোলা পেট্রোল পাম্প এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শওকত হোসেন দিদারের (৩৮) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গাড়িবহরে থাকা গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিক উজ্জামান জানান, শুক্রবার বিকেলে গোপালগঞ্জ সদরের বেদগ্রাম মোড়ে বিএনপির পথসভা হয়। সভা শেষে এস এম জিলানী গাড়িবহর নিয়ে গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলেন। পথে ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছলে মাইকিং করে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২০০-৩০০ নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ব্যারিকেড দেন। এক পর্যায়ে তারা গাড়ি ভাঙচুর ও নেতাকর্মীদের কুপিয়ে জখম করেন।
সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিকদার শহিদুল ইসলাম লেলিন জানান, ঘোনাপাড়া মোড়ে গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিন মোল্লা, গোবরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিকরুল ফকির, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলিমুজ্জামান ও হাসান মোল্লার নেতৃত্ব হামলা করা হয়।
হামলার কথা স্বীকার করে ঘোনাপাড়ার আওয়ামী লীগ নেতা আলীমুজ্জামান বলেন, এস এম জিলানীর গাড়িবহর ঘোনাপাড়া অতিক্রমের সময় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ব্যানার ছিঁড়ে পদদলিত করে। বিষয়টি আমরা মাইকিং করে সবাইকে জানালে, স্থানীয়রা সংগঠিত হয়ে তাদের প্রতিরোধ করেন। তখনই অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. আনিসুর রহমান শওকত হোসেন দিদারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, তার মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের পর তার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আনিচুর রহমান জানান, বিএনপির নেতাকর্মী গাড়িবহর নিয়ে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলেন। কেন এমন হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে শুনেছি, ব্যানার টানাটানি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। পরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঘোনাপাড়ার অদূরে দোলা পাম্পের বিপরীত পাশ থেকে শওকত আলী দিদার নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানান তিনি।
এ সময় এস এম জিলানী, তাঁর স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না, রাজু বিশ্বাস, মাহাবুব খান মুরাদ, লিন্টু মুন্সী, গোপালগঞ্জের সালমান সিকদার, সুজন সিকদার, সবুজ সিকদার, ঢাকার মতিঝিল এলাকার নাসির আহমেদ মোল্লা, বাদশা মোল্লা, নিশান, হাসান, মাতুয়াইলের আলাউদ্দিনসহ ১৬ জন গুরুতর আহত হন। আহতদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এবং তিনজনকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। পরে জিলানী, তার স্ত্রী রত্না ও বাদশার অবস্থার অবনতি হলে, তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়া সময় সময় টিভির গোপালগঞ্জের ক্যামেরা পারসন এইচ এম মানিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. ফারুক আহমেদ জানান, এস এম জিলানীসহ ১৬ জনকে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেশির ভাগেরই মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের জখম রয়েছে। তিনজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা না গেলে চিকিৎসাধীনদের শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না।