জন্মভূমি ডেস্ক
গোপালগঞ্জ জেলায় কচুরিপানার ভাসমান বেডে কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এখন ভাসমান বেডে সারাবছর বাণিজ্যিক ভাবে সবজি, ফল, শাক ও মসলা উৎপাদিত হচ্ছে। গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলার ১ হাজার ৮ ০০ কৃষক লাভজনক এ প্রযুক্তি গ্রহণ করেছেন।
গোপালগঞ্জ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে শত বছর ধরে গোপালগঞ্জে কচুরিপানার ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদিত হয়ে আসছে। স্থানীয় কৃষকরা নিজের প্রয়োজনে এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। বেডের সাইজ তারা বড় করত। তাই ¯্রােতে ও বাতাসে বেড ভেঙ্গে যেত। তখন তারা এ বেডে ঢোঁড়শ, লাল শাক, ডাটাসহ পাতা জাতীয় সবজির আবাদ করত।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে ভাসমান কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ করে ৫ বছরে আগে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা স¤প্রসারণ এবং জনপ্রিয় করণ প্রকল্প গ্রহণ করে। পরে তারা মাঠ পর্যায়ে সরেজমিনে কৃষকদের সাথে গবেষণা কাজ শুরু করে। তারা বেডের আকার ছোট করেন। ভাসমান বেডে পাতা, লতা , ফল ও মসলা জাতীয় ফসলের চাষাবাদ শুরু করেন। এতে গোপালগঞ্জে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। আর এ সাফল্যই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা স¤প্রসারণ এবং জনপ্রিয় করণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার বলেন, আমাদের কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। দিনদিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে জলবায়ূ পবিবর্তনের ঝুঁকির মধ্যে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জলমগ্ন এলাকার জমি বর্ষাকালে সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার এ প্রকল্প গ্রহণ করে। ভাসমান কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি স¤প্রসারিত হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত সম্ভব হবে।
আমরা ভাসমান বেডে কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি কৃষককে শিখিয়ে দিয়েছি। এখন তারা এখানে তরমুজ, বাঙ্গি, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা, হলুদ, শসা, লাউ, কুমড়া, টমেটো, ঢ্যাড়শ, চিচিঙ্গা, ফুলকপি, ঝিঙ্গে, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, লাল শাক, ঘি-কাঞ্চন শাক, পালংশাক সহ বিভিন্ন ফসল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছেন। এগুলো নিজেরা খাচ্ছেন। বাড়তি ফসল বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছেন। এ পদ্ধতির চাষাবাদ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের স¤প্রসারণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়–য়া বলেন, গোপালগঞ্জে ২২৯ টি বিল ও জলাভ‚মি রয়েছে। বর্ষাকালে এগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এখানে প্রচুর কচুরিপানা পাওয়া যায়। তাই কচুরিপানা দিয়ে পানির ওপর ভাসমান বেড তৈরী করে ২২৯ টি বিল ও জলাশয়ে চাষাবাদ স¤প্রসারণ করতে পারলে এ জেলা থেকে উৎপাদিত ভাসমান বেডের সবজি দেশের বিশাল একটি অংশের সবজির চাহিদা মেটাতে পারবে। খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে এ পদ্ধতির চাষাবাদ ভুমিকা রাখবে।
গোপালগঞ্জে ভাসমান কৃষির আধুনিক প্রযুক্তিতে খাদ্য নিরাপত্তার সম্ভাবনা
Leave a comment