পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, পাইকগাছা : ঘুর্ণিঝড় রেমাল এর তান্ডবে উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছা এলাকা তছনছ করে দিয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার বিভিন্ন পোল্ডারে ক্ষতিগ্রস্থ পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রামে হু হু করে লবণ পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। এতে হাজার-হাজার বিঘার চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে মাছ ভেসে গিয়ে কোটি-কোটি টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। রবিবার রাতের জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে ১০/১২ পেল্ডারের গড়ইখালীর কুমখালীর ক্ষুদখালীর ভাঙন, ২৩ নং পোল্ডারের লস্করের বাইনতলা, কড়ুলিয়া সহ ৩টি স্থানে, লতা,দেলুটি, হরিঢালী, রাড়ুলী, কপিলমুনি, সোলাদানার কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধ উপছে লোকালয়ে লবণ পানি ঢুকে ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট, ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। দেলুটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল বলেন, ২২ নং পোল্ডারের তেলিখালী, কালিনগর, দারুণমল্লিক, বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৫ টি গ্রাম, ২১ নং পোল্ডারের দেলুটি পূর্ব ও পশ্চিম পাড়া, জিরবুনিয়া স্লুইসগেট সংলগ্ন ১,৩,৪ নং ওয়ার্ডের ৪টি গ্রাম এবং ২০ এর ১নং পোল্ডারের পারমধুখালী প্রতিরক্ষা বাঁধ, চাকরিবাকরি বাঁধ ২, ৩ নং ওয়ার্ডের ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান কেএম আরিফুজ্জামান তুহিন জানান, লস্কর ২৩ নং পোল্ডারের ভেঙে কড়ুলিয়ার ১নং ওয়ার্ড প্লাবিত। গড়ইখালী ইউপি চেয়ারম্যান আ. ছালাম কেরু জানান,
খুদখালী, কুমখালীর ৫,৩,৪ নং ওয়ার্ড ভেঙে গড়ইখালী বাজার আবাসন পানিতে প্লাবিত। লতার ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাস বলেন,
লতার কাঠামারি, গদারডাঙা, বামনের আবাদ, পুতলাখালী, হালদার চক, বাইনচাপড়া, পানারাবাদ ও পুটিমারী ভাঙনে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গদাইপুর ইউনিয়নের পুরাইকাটি বিলের ওয়াপদার বেড়িবাঁধ দুই জায়গায় ভেঙে গেলে স্বেচ্ছাশ্রমে জোয়ার আসার পূর্বেই সংস্কার করা হয়েছে বলে জানান, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল ইসলাম জিয়া। পিআইও ইমরুল কায়েস জানান, রেমালের রাতেই সোলাদানার হরিকাটিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে পুরা এলাকা প্লাবিত। এখনও বসত ঘরে পানি। এছাড়া বেতবুনিয়া আবাসন, নুনিয়াপাড়া, পাটকেলপোতা, উত্তর ও পশ্চিম কাইনমুখীতে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাড়ুলী ইউনিয়নের অব. অধ্যক্ষ হরেকৃষ্ণ দাশ জানান, রাড়ুলীর ৫, ৪ নং ওয়ার্ডের ৩টি গ্রাম এবং ৩নং ওয়ার্ড ২টি গ্রাম বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কাওছার জোয়াদ্দার বলেন, তালতলার ওয়াবদার বেড়িবাঁধ ভেঙে ১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে সরেজমিনে খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান সারাদিন ব্যাপী পোল্ডার রক্ষায় বাঁধ মেরামতে এলাকার মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে কাজের তদারকি করছেন। পানিউন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন স্থানে জিও ব্যাগ ও বস্তা সরবরাহ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন, ওসি মো. ওবাইদুর রহমান সহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নেওয়া মানুষের খাদ্য-পানি তুলে দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন জানান, রেমালে উপজেলায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা আনু. ১ লাখ ৫৭ হাজার ২২০ জন। ঘরবাড়ি ১৩ হাজার ৪১০ টি আংশিক এবং ৮৩১ টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ২৫ হাজার ৪৯৪ জন আশ্রিত। এছাড়া মহিষ, গরু, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে।
সরেজমিনে গেলে এলাকার মানুষ দাবি সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে বাঁধ মেরামত করা না হলে ঐদিন রাতের জোয়ারে সমস্ত এলাকা আবারো প্লাবিত হয়ে ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে।
ঘুর্ণিঝড় রেমাল এর তান্ডবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে উপকূলীয় এলাকা লন্ডভন্ড

Leave a comment