
জন্মভূমি ডেস্ক
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিত্রাংয়ের শক্তি ক্রমশ বাড়ছে। এটির কেন্দ্রে শক্তি বাড়তে বাড়তে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির যে গতিপথ, এতে এটি বাঁক খেয়ে বাংলাদেশের উপক‚লের দিকে এগিয়ে আসবে। আগামীকাল মঙ্গলবার বরিশাল অঞ্চলে আঘাত হেনে স্থলভাগে উঠে আসবে।
ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞানী অখিল শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, রোববার রাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর সোমবার সকাল নাগাদ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে সিত্রাং। তখন ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে ঘণ্টায় বাতাসের একটানা গতিবেগ উঠে যাবে ১০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। ওই দিন রাতেই এটি আরও শক্তি সঞ্চয় করলে ঘর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ উঠবে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত। মঙ্গলবার সকালে সুন্দরবনের তিনকোণা দ্বীপ ও নোয়াখালীর স›দ্বীপের মাঝ দিয়ে বরিশাল বিভাগের স্থলভাবে উঠে আসবে সিত্রাং।
এদিকে ক্রমশ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর শক্তি বাড়ায়ে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে চার নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। রোববার রাতে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নি¤œচাপটি আরও সামান্য উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভ‚ত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এ পরিণত হয়ে পূর্ব-মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায় (অক্ষাংশ: ১৬.৩ক্ক উত্তর, দ্রাঘিমাংশ: ৮৮.২ক্ক পূর্ব) অবস্থান করছে। এটি রোববার সন্ধ্যা ৬ টায় (২৩ অক্টোবর) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘণীভ‚ত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকায় ৪০-৫০ কি.মি. বেগে দমকা/ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেইসঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
এই অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপক‚লীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, ল²ীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশের দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে।