জন্মভূমি ডেস্ক : চীনে কয়েক বছর ধরে চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা ২০২৪ সালেও অব্যাহত থাকবে। দেশটির স্থানীয় পর্যায়ের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রায় এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। মূল ভূখণ্ডের ৩১টি প্রাদেশিক সরকারের অর্ধেকেরও বেশি গত বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রায় লাগাম টেনেছে। যদিও কিছু স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের চেয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করছে।
সম্প্রতি স্থানীয় পর্যায়ে আইনসভা বৈঠকে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। চীনের গণমাধ্যম সাইশিনের বিশ্লেষণে বলা হয়, ২০২৪ সালে প্রদেশ ও পৌরসভা ভেদে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। তিয়ানজিন পৌরসভার লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, অন্যদিকে হাইনান প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত তিব্বতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য প্রায় ৮ শতাংশ।
গত মাসে বার্ষিক আইনসভা বৈঠকে স্থানীয় সরকারগুলো ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের প্রতিবেদন দাখিল করে। এর সঙ্গে চলতি বছরের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে।
১৬টি প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে কমিয়ে এনেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম লক্ষ্যমাত্রা দেখিয়েছে জিয়াংজি ও হাইনান প্রদেশ, যথাক্রমে ২ ও ১ দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়েছে তারা। প্রাদেশিক আইনসভায় দাখিল করা প্রতিবেদন অনুসারে, জিয়াংজি প্রায় ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য রাখছে।
শানসি ও ইউনান প্রদেশ উভয়ই ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে প্রায় ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রায় নেমে এসেছে। বাকি ১২টি প্রদেশ ২০২৩ সালের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কম করেছে।
তবে ছয়টি প্রাদেশিক-স্তরের সরকার তাদের জিডিপি সম্প্রসারণের লক্ষ্যমাত্রা বজায় রেখেছে এবং পাঁচটি গত বছরের মতো একই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য রয়েছে ঝেজিয়াং ও লিয়াওনিং প্রদেশ এবং বেইজিং ও তিয়ানজিন পৌরসভায়। এসব অঞ্চলে ২০২৩ সালের প্রাক্কলনের তুলনায় চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্টে বেড়েছে। ঊর্ধ্বমুখী সমন্বয় সত্ত্বেও সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্বাধীন চারটি পৌরসভার মধ্যে তিয়ানজিনের লক্ষ্যমাত্রা ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ৩১টি অঞ্চলের মধ্যে সর্বনিম্ন।
চীনের অনেক অঞ্চল ২০২৩ সালের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। জিরো-কভিড নীতির আঘাত সামলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা আংশিকভাবে ২০২২ সালে বাস্তবায়ন হয়েছে। ওই বছরের শেষ দিকে অর্থনীতি পুরোপুরি সচল হওয়ার প্রাথমিক স্তরে গতি বাড়লেও পরে কমে যায়। ফলে ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কয়েকটি সহায়ক নীতি চালু করে চীন সরকার।
১৩টি প্রাদেশিক-স্তরের সরকারের এবারের জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা ২০২৩ সালে অর্জিত প্রকৃত প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে আনহুই, হুনান, গুইঝো ও ফুজিয়ানসহ নয়টি প্রদেশে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। পাঁচটি অঞ্চলে চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের প্রকৃত প্রবৃদ্ধির সমান বা মোটামুটি একই। এছাড়া ১৩টির লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের চেয়ে কম।
চীনের উত্তর-পূর্ব শিল্প প্রদেশ লিয়াওনিং বার্ষিক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৩ সালে এখানে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপি অর্জন হয়েছে। এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো জাতীয় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারকে (৫ দশমিক ২ শতাংশ) অতিক্রম করেছে প্রদেশটি। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কৌশলগত সুবিধা গ্রহণ লিয়াওনিংয়ের ব্যবসায়িক পরিবেশে বড় পরিবর্তন, শিল্প সংস্কার ও অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনে ভূমিকা রাখছে।
কিছু বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণ অনুসারে, ২৮টি প্রাদেশিক-স্তরের সরকারের গড় জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা মূলত ২০২৩ থেকে লক্ষ্যকে অপরিবর্তিত রেখেছে। ঐতিহাসিকভাবে জাতীয় জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা স্থানীয় গড় থেকে প্রায় দশমিক ৫ শতাংশ কম থাকে। এ অনুসারে, কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৪ সালের জন্য জিডিপি সম্প্রসারণের লক্ষ্য ৫ শতাংশ নির্ধারণ করতে পারে।
আগামী ৫ মার্চ বেইজিংয়ে চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের বার্ষিক সভা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। এ সময় তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলো ঘোষণা করবেন।
মহামারীকালে অন্যান্য অর্থনীতির তুলনায় বেশ দীর্ঘ সময় জিরো-কভিড নীতি অনুসরণ করে চীন। আবার পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার গতিও সুষম ছিল না, যার প্রভাব পড়েছে পরবর্তী বছরগুলোর প্রবৃদ্ধিতেও। তবে দেশটির ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস গত মাসে জানিয়েছিল, পূর্ণ বছরের জিডিপি বাড়ার হার ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের মার্চে ঘোষিত ‘প্রায় ৫ শতাংশ’-এর সরকারি লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
চলতি বছরের শুরুতেই চীনের অর্থনীতিতে বিভিন্ন নেতিবাচক অনুঘটক দেখা গেছে। আবাসন খাতে দীর্ঘস্থায়ী মন্দা, স্থানীয় সরকারের ঋণ সংকট ও মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ রয়েছে দেশটির সামনে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদাসহ বিভিন্ন জটিলতা মুখোমুখি হতে পারে চীনের অর্থনীতি।