প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৬ মাস আগে
শেখ মোহাম্মদ আলী, শরণখোলা : প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৬ মাসেরও বেশি আগে। অথচ এখনো চালু হয়নি পূর্ব সুন্দরবনের আলীবান্দা ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র। আগ্রহ থাকলেও পর্যটকরা আলীবান্দা যেতে পারছেননা। বিপুল অংক রাজস্ব হারাচ্ছে বনবিভাগ।
সরেজমিনে আলীবান্ধা ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, পর্যটকদের সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখার জন্য সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্দা ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্রে নির্মাণ করা হয়েছে ৫০ফুট উচ্চতার ওয়াচ টাওয়ার। নির্মীত হয়েছে হেটে বন দেখার জন্য এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ফুটট্রেইল। এছাড়া আলীবান্দায় নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটকদের জন্য পাবলিক টয়লেট, গোলঘর, স্যুভেনির শপ, টিকেট কাউন্টার, ঢালাই জেটি, পাকা রাস্তা, কাটা হয়েছে ঘাট বাঁধানো দুটি পুকুর, হরিণ রাখার জন্য করা হয়েছে লোহার বেষ্টনি ও সেড। ৬ মাসেরও বেশী সময় আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছেনা আলীবান্দা। প্রতিদিন অনেক পর্যটক আলীবান্দা যেতে চাইলেও তাদের যেতে দেওয়া হচ্ছেনা। বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ সদর ও শরণখোলা বাজার থেকে নদীপথে ট্রলারে আলীবান্দা যেতে সময় লাগে ৪০/৫০ মিনিট। লোকালয়ের এতো কাছাকাছি আলীবান্দায় ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠায় দিন দিন পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাড়িয়েছে আলীবান্দা।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, অদুর ভবিষ্যতে সুন্দরবনের গহীনের পর্যটনস্পট কটকা, কচিখালী, হিরণপয়েন্ট, দুবলারচরসহ অন্যান্য পর্যটনস্পটে পর্যটকদের যাওয়া নিরুৎসাহিত করতে বনবিভাগ লোকালয়ের কাছাকাছি সুন্দরবনে ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র চালু করার প্রকল্প গ্রহণ করে। চার বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের আওতায় পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্দা, চাঁদপাই রেঞ্জের, ধানসাগর, হাড়বাড়িয়া ও আন্ধারমানিক নামক স্থানে ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র করার কাজ শুরু করা হয়। ইতিমধ্যে হাড়বাড়িয়া ও আন্ধারমানিক ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র দুটি পুরোদমে চালু করা হয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শরণখোলা রেঞ্জের কয়েকজন বনরক্ষী জানান, এখন পর্যটন মৌসুম চলছে। প্রতিনিয়ত অনেক পর্যটক আসেন কি›তু তাদের আলীবান্দা যেতে দেওয়া হয়না। তাছাড়া বেষ্টনীতে হরিণ না ছাড়ায় কেউ কেউ আলীবান্দা যেতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন যে কারণে বনবিভাগ বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছেন বলে ঐ বনরক্ষীরা জানান।
সুন্দরবনের ট্যুর অপারেটর শরণখোলার রাসেল আহমেদ বলেন, অপার সম্ভাবনার আলীবান্দা ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র চালু হলে এখানে পর্যটকের ঢল নামবে। ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকার পর্যটকেরা অতি অল্প সময়ে কম খরচে সুন্দরবনের এই এলাকা ভ্রমণ করে যেতে পারবে বলে তিনি জানান।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ( ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করীম বলেন, আলীবান্দায় ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্রের কাজ শেষ হলেও বনরক্ষীদের থাকার জন্য ব্যারাক নির্মাণ না হওয়ায় পর্যটন কেন্দ্র চালু করা যাচ্ছেনা। এ কারণে নির্মীত বেষ্টনীতে হরিণ ছাড়া হয়নি। তিনি বলেন, শীঘ্রই বনরক্ষীদের জন্য ব্যারাক নির্মাণের কাজ শুরু হবে এবং আলীবান্দার পুকুরে লোহার বেষ্টনী দিয়ে পুকুরে কুমির ছাড়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ এপ্রিলের দিকে আলীবান্দা ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকদের জন্য পুরোপুরি খুলে দেওয়া যাবে বলে ডিএফও জানিয়েছেন।
সুন্দরবনে ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও বনবিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, আলীবান্দা ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্রের কাজ শেষে কয়েকমাস আগেই কেন্দ্রটি সুন্দরবন পূর্ববিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রটি এখনো চালু না হওয়ার কারণ পুর্ব বনবিভাগ বলতে পারবে বলে তিনি জানান। আলীবান্দা ইকোট্যুরিজম পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে বনরক্ষীদের ব্যারাক না থাকায় প্রকল্প থেকে সেখানে বনরক্ষীদের আবাসন নির্মাণ করা হয়নি বলে সিএফ জানিয়েছেন।