শ্যামল দত্ত, চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় চলতি আমন মৌসুমে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান চাল সংগ্রহে ভাটা পড়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ১৭ নভেম্বর সারাদেশে একযোগে আমন ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন খাদ্য উপদেষ্টা।
তবে এ কার্যক্রমে কৃষক ও মিলারদেরও সাড়া মেলেনি মোটেও। উদ্বোধনের পর গুদামে মিলারদের দেওয়া চাল কিছুটা এলেও ধান পড়েনি এক দানাও। গত দেড় মাসে গুদামে ধান আসেনি। মিলারদের নিকট থেকে মাত্র ২২ টন চাল এসেছে বলে জানান উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান।
উপজেলা খাদ্য গুদাম সুত্রে জানা যায়, ১৭ নভেম্ববর চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করা হয়েছে।
যা শেষ হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫। খাদ্যগুদামে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পৌর এলাকার কৃষকের নিকট থেকে সরাসরি প্রতিকেজি ধান ৩৩ টাকা দরে ক্রয় করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে আমনধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ২শ ৪৩ মেট্রিকটন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় অর্ধেক শেষ হলেও এ পর্যন্ত এক দানা ধানও পড়েনি সরকারি খাদ্য গুদামে।
অপরদিকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬শ ৮৫ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২২ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৫ শতাংশ। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বর্তমানে চিকন ধান প্রতি কেজি ৩৭.৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মোটা জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫ টাকায়।
উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়নের গরীবপুর গ্রামের কৃষক আলমগীর, এনামুল হোসেন, সিংহঝুলী ইউনিয়ন মশিয়ার নগর গ্রামের আবুল কাশেম জানান, আমাদের স্থানীয় বাজারে যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে, গুদামে সে দাম দেওয়া হচ্ছে না, গুদামের চাইতে স্থানীয় বাজারে মনপ্রতি ধানের দাম কমপক্ষে ২শ থেকে ৩শ টাকা বেশী। তাছাড়া সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। যে কারণে বাইরে ব্যবসায়ীদের নিকট কৃষকরা ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিল মালিকরা জানান, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলাবাজারে চালের দাম বেশি হওয়ার ফলে খাদ্যগুদামে চাল দিতে মিলারদেরও তেমন আগ্রহ নেই। কিন্তু মিলের লাইন্সেস বাঁচাতে লোকসান সত্বেও একপ্রকার বাধ্য হয়ে চুক্তি অনুযায়ী সরকারি গুদামে চাল দিতে হচ্ছে।
মিল মালিকরা বলেন, বর্তমানে বাজারে ৬০/৬৫ টাকার নিচে কোনো চাল নেই। অথচ সরকারি গুদামে চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ টাকা। গুদামে চাল দিতে দেখা চোখে প্রতি কেজিতে ১৫/১৬ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, ধান-চাল ক্রয়ে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলাবাজারে দাম কিছুটা বেশি। এদিকে সরকারি নীতিমালা অনুসারে গুদামজাত করা ধানের আদ্রতা ১৪ শতাংশের বেশি হলে সেই ধান কেনা যাবে না। সে কারণে কৃষকরা গুদামে ধান বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।
চৌগাছা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ফাতেমা সুলতানা বলেন, সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ধান-চাল সংগ্রহর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।