মোঃ এজাজ আলী : পানি পরিষ্কার ও জলাভূমির জীববৈচিত্র্যে শামুকের ভূমিকা রয়েছে। একসময় নদী-খালসহ বিভিন্ন জলাশয়ে শামুকের অবাধ বিচরণ থাকলেও এখন অনেকটাই কমেছে। কারণ হিসেবে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় শামুকের আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, ছোট ও ডিমওয়ালা শামুক আহরণের কারণেও সংকটে পড়েছে জলজ এ প্রাণীটি।
পরিবেশ বিষেশজ্ঞদের মতে, নব্বইয়ের দশক থেকে সাতক্ষীরায় ফসলি জমিতে ঘের তৈরি হয়। একদিকে বাগদা চাষের জন্য লবণ পানি ব্যবহারে শামুকের বংশ বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। অন্যদিকে গলদা চিংড়ির খাদ্য হিসেবে শামুকের মাংস ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার খোলস দিয়ে চুন, ঘেরের পানি পরিষ্কার করার পাউডার তৈরি করা হয়। খামারে মুরগির খাদ্য তৈরির উপকরণ হিসেবেও ব্যবহৃত হয় শামুকের খোলস। এছাড়া প্রতি বছর ব্যাপক হারে ছোট ও ডিমওয়ালা শামুক আহরণ করায় এ অঞ্চলের জলাভূমিতে প্রাণীটির বিচরণ কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও শামুক কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মিঠাপানির জলাশয়ে লবণাক্ততা কারণে শামুকের বংশ বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিচরণ কমে যাওয়া শামুকের মধ্যে রয়েছে সোনালি গ্লোবোজা শামুক, জোংড়া শামুক, গুলিশামুক, স্ক্রু শামুক ও কেঁচো উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন সময় খাল, বিল, পুকুর, ডোবা, জলাশয় থেকে এসব শামুক সংগ্রহ করে বিক্রি করা হচ্ছে। শামুক এভাবে ধ্বংস করে ফেললে পরিবেশের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এটি সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. অলিউর রহমান বলেন, ‘জলাশয়ের আবর্জনা পরিষ্কার রাখাসহ বিভিন্ন প্রাণীর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয় শামুক। মাছ ও হাঁস-মুরগির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করার পর শামুকের খোলস অন্যান্য কাজেও ব্যবহার হয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রাণীটি টিকিয়ে রাখতে হবে। শামুকের আবাসস্থল নষ্ট ও বেপরোয়া আহরণ বন্ধ করতে হবে।’
অবশ্য সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে নতুন করে শামুকের আবাসস্থল সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সদর উপজেলার এল্লারচরে অবস্থিত সরকারি চিংড়ি প্রদর্শনী খামারে ১৬ বিঘা জমির চারটি পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির শামুক সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এই প্রথমবার সাতক্ষীরা জেলা অফিসের পক্ষ থেকে শামুকের আবাসস্থল সৃষ্টি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মূলত শামুক সংরক্ষণ ও নিরাপদ বংশবিস্তারের জন্য উদ্যোগটি নেয়া হয়েছে।’
শামুক রক্ষায় বেসরকারি উদ্যোগে বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার, মাঠ দিবসের মতো কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কেউ যাতে জলাশয়, পুকুর, বিল ও খাল থেকে শামুক উত্তোলন করতে না পারে, সেজন্য জমিতে ছোট ছোট সাইনবোর্ড স্থাপন করে শামুকের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা যেতে পারে বলেও অেিহাসেন নাহিদ বলেন, ‘পরিবেশে সম্পূর্ণ নিজস্বতা নিয়ে টিকে থাকলেও নানা কারণে শামুক কমে যাচ্ছে।’
এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, প্রজননের সময় শামুক উত্তোলন ও বিক্রি, মাছের খাদ্য হিসেবে ঘেরে ব্যবহার, চুন তৈরি, ডিমওয়ালা শামুক নিধন, শামুকের আশ্রয়স্থল কমে যাওয়া, জলাশয় কমে যাওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, হাঁসের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার, কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি। এছাড়া শামুকের প্রজনন এবং বংশ বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব, ছোট শামুক বিনষ্ট, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় শামুক বিপন্ন হয়ে পড়েছে।