
জন্মভূমি ডেস্ক
বঙ্গবন্ধুর চার খুনির রাষ্ট্রীয় খেতাব ও পদক বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। রোববার (৬ জুন) এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব রথীন্দ্রনাথ দত্তের সই করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানোনো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম; তাকে বীর উত্তম খেতাব দেওয়া হয়, তার গেজেট নম্বর ২৫। এছাড়া লে. কর্নেল এস এইচ এম এইচ এম বি নূর চৌধুরী; তাকে বীর বিক্রম খেতাব দেওয়া হয়, তার গেজেট নম্বর ৯০। আরও রয়েছেন লে. এম রাশেদ চৌধুরী; তাকে দেওয়া হয় বীর প্রতীক খেতাব, তার গেজেট নম্বর ২৬৭ এবং নায়েক সুবেদার মোসলেম উদ্দীন খান; তাকেও বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হয়, তার গেজেট নম্বর ৩২৯।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০০২ (২০০২ সনের ৮ নম্বর আইন) এর ৭ (ক) ধারা অনুযায়ী প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা সরকার, এতদ্বারা রুলস অব বিসনেস ১৯৯৬ এর শিডিউল-১ (অ্যালোকেশন অব বিসনেস) এর তালিকা ৪১ এর ৫ নম্বর ক্রমিকে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জামুকার ৭২তম সভায় বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের খেতাব বাতিলের প্রস্তাব করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের খেতাব বাতিল করা হলো।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিয্দ্ধুবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন ঘটনার নজির রয়েছে। ভিয়েতনামের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ভালো কাজের জন্য এক সময় যে ব্যক্তি পুরস্কৃত হয়েছে, পরবর্তী সময়ে তার বিপরীতমুখী আচরণ ও খারাপ কাজের জন্য সে পুরস্কার বাতিলও হয়েছে। সেসব বিবেচনায় নিয়ে আমরাও এবার করেছি। এর মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হলো।
এর আগে চলতি বছরের ৯ ফেব্রæয়ারি জামুকার ৭২তম সভায় বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত চার খুনির খেতাব বাতিলের সুপারিশ করা হয়। সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের খেতাব বাতিল করা হলে কেন জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করা হবে না- মর্মে প্রশ্ন তোলেন জামুকার সদস্য শাজাহান খান এমপি। এ সময় তিনি তার প্রশ্নের সপক্ষে নানান যুক্তি তুলে ধরেন। পরে সভার সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রীসহ অন্য সদস্যরা শাজাহান খানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
জামুকা সূত্রে জানা গেছে, সংবিধান লঙ্ঘন, সংবিধানের মূলনীতি বাতিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের সমর্থন দেওয়া, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখা, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা উল্লেখ থাকা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, দেশত্যাগে সহযোগিতার পাশাপাশি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠনের অভিযোগ এনে জামুকার এক বৈঠকে তার খেতাব বাতিলের সুপারিশ তোলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জামুকার ৭২তম বৈঠকে জিয়াউর রহমানসহ স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাÐের সঙ্গে জড়িত থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের খেতাব বাতিলে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
সংসদ সদস্য ও জামুকার সদস্য মোশাররফ হোসেনকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে আরও আছেন সংসদ সদস্য শাহজাহান খান ও মো. রশিদুল আলম। কমিটিকে দুই মাস সময় দেওয়া হয়। ওই দুই মাসের মধ্যে জিয়াউর রহমানসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার সঠিক প্রমাণ ও তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয় কমিটিকে। তাদের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত এলো। তবে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।