জন্মভূমি ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন এলিট ফোর্স র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
জাবির এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ওই দম্পতির পূর্বপরিচিত মামুনুর রশিদ মামুনকে চিহ্নিত করেছে র্যাব।
র্যাব বলছে, বহিরাগত হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল মামুনের। মাদক কারবারি মামুন কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে বিক্রি করতেন। তার ইয়াবা বিক্রির হটজোন জাবি ক্যাম্পাস, বিশেষ করে বটতলা।
ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি মামুন ও মুরাদকে গ্রেপ্তারের পর এসব জানিয়েছে র্যাব। মামুনকে রাজধানীর ফার্মগেট থেকে এবং মুরাদকে নওগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রæয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মামুন ২০১৭ সাল থেকে জাবি ক্যাম্পাসের সিনিয়র প্রভাবশালী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে মাদক কারবার করে আসছেন। ক্যাম্পাসে আগেও নারী নিপীড়ন, ধর্ষণসহ শ্লীনতাহানির ঘটনায় জড়িয়েছে সে।
৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশের জঙ্গলে এ ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এ নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসান প্রান্ত, ৪৬তম ব্যাচের সাগর সিদ্দিকী এবং উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সাব্বির হাসানকে আটকের কথা জানায় সাভার ও আশুলিয়া থানা পুলিশ। আশুলিয়া থানায় মামলাও করেন ওই নারীর স্বামী।
কমান্ডার মঈন বলেন, মাদক বিক্রির সুবাদেই মামলার ১ নম্বর আসামি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন ছাত্রের সাথে তার সখ্যতা তৈরি হয়। আর একই এলাকায় বসবাসের সুবাদে পরিচয় হয় ভুক্তভোগী তরুণীর স্বামীর সাথে।
ভুক্তভোগীর স্বামীর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় মামুন মাদক সরবরাহ করতেন বলেও জানতে পেরেছ র্যাব।
কমান্ডার মঈন বলেন, বেশিদিন একস্থানে থাকতেন না মামুন। মাদক কারবারের কারণে কিছুদিন পূর্বে গ্রেপ্তার মামুনের থাকার জায়গার সমস্যা সৃষ্টি হয়। তখন তিনি ওই দম্পতির সাথে একটি বাসায় সাবলেট থাকেন।
ঘটনার দিন যা হয়
র্যাব বলছে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মামুন ওই তরুণীর স্বামীকে ফোন করে বলেন— মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তার থাকার ব্যবস্থা করেছেন। ওই বড় ভাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে বলেন মামুন। মামুনের কথা মতো সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে দেখা করেন তিনি। সেখানে মামলার অন্য আসামি মুরাদ, সাব্বির হাসান, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সাথেও পরিচিত হন তিনি।
মামুন এরপর কৌশলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে বলেন, বাসায় থেকে যাওয়া তার (মামুন) কাপড়গুলো তার স্ত্রী যেন একটি ব্যাগে করে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে নিয়ে আসেন। এরপর রাত ৯টার দিকে মামুনের ব্যবহৃত কাপড় নিয়ে হলের সামনে উপস্থিত হন ওই তরুণী। এ সময় মামুন ও মোস্তাফিজ মুরাদকে বলেন, ওই তরুণীর স্বামীকে ৩১৭ নম্বর রুমে নিয়ে যেতে।
এই সুযোগে ভুক্তভোগী তরুণীকে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে। পরে মামুন ও মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমে গিয়ে তার স্বামীকে বাসায় চলে যেতে বলে।
বাসায় গিয়ে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা জানতে পেরে থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করেন তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন,মামুন প্রায় ২০ বছর আগে জুরাইন এলাকায় গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে চাকরি শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি আশুলিয়া এলাকায় এসে গার্মেন্টসের চাকরির পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হন। মাদক ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীর সেঙ্গ তার সখ্যতা তৈরি হয় ও ২০১৭ সাল থেকে তিনি পুরোপুরি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক সংক্রান্ত ৮টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় একাধিক বার কারাভোগও করেছেন তিনি।