মিজানুর রহমান, মোরেলগঞ্জ : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার একমাত্র পত্রিকা হকার দিপক। পরমপরা ভাবেই তার পিতা কাকারা এ পত্রিকা হকারি করে আসছে যুগ-যুগ ধরে। পত্রিকাই তাদের জীবিকার প্রধান উৎস ছিল। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, বীমা, বিভিন্ন দোকান, বাসা-বাড়িতে পৌঁছানোই মূলত হকারের কাজ। কাক ডাকা সকালে বাড়ি থেকে রওয়ানা হয়ে পত্রিকা নিয়ে প্রত্যেকের দ্বারে পৌছে দিয়ে আনোন্দ পায় নিরলস হকার দিপক। সদা হাস্যময় দিপক খুবই পরিশ্রমী ও মিতব্যয়ী। সারা দিন হকারি করে বাড়িতে গিয়ে নিজের ও বরগা জমিতে আমন ধানের চারা লাগাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। নানান লোকের নানান কথা হজম করে প্রত্যেকের দোরগোরে নিরলসভাবে পৌঁছে দেন পত্রিকা। সহজ সরল মানুষটি কয়েক কি. মিটার হেটে হেটে পত্রিকা বিলি করে থাকেন। তিনি দৈনিক জাতীয়, আঞ্চলিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, চাকুরির পত্রিকা সকল পাঠকদের হাতে তুলে দেন। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে জানা অজানা সব খবরা খবর তার দেওয়া পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারে। যে হকারের মাধ্যমেই অজানাকে জানতে পারে কিন্তু এই হকারই হয় সবার কাছে অবহেলিত।
তা না হলে দুই সহোদর ভাই মিলে মোরেলগঞ্জের সকল অফিস বাসা, ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পত্রিকা বিলি করতো। সবই ঠিক-ঠাক চলছিল, তখনই করোনা মহামারি ওলট পালট করে দেয় তাদের জীবন-জীবিকা। লকডাউনের সময় পত্রিকা যখন বন্ধের পথে তখন দিপকের ভাই আশিস পত্রিকা (হকার) দিন মজুরী কাজ শুরু করেন। এতেই কাল হয়ে দাঁড়ায়। দিন আনে দিন খায় ভালোই চলছিল লকডাউনে। হঠাৎ কাজে যাবার সময় গাড়ি দুর্ঘটনায় আশিসের পা ভেঙ্গে পঙ্গু হয়ে যায়। দুঃখের সাথে আশিস বলেন, এত মানুষের দ্বারে-দ্বারে পত্রিকা পৌছে দিলাম, ভালবাসা অর্জন করলাম। যে পত্রিকা একদিন না দিলে সবাই ফোন দিত কিন্তু আমার যখন দুর্ভোগ এলো সহযোগিতা তো দূরের কথা কেউ ফোন দিয়েও জানার প্রয়োজন মনে করেনি। এমনিকি কোন সাংবাদিক দাদারাও না। আশিস আর হকারি করেনা। কিন্তু দিপক হকারি চালিয়ে যাচ্ছে।
দিপকের কাছে জানতে চাইলে দিপক এক রাস মুখে হাসি দিয়ে বলেন, দাদা বিধাতা যেরকম চাইছে তেমনি ছেলে সন্তান নিয়ে ভালই আছি। সকালে পত্রিকা বিলি করি বিকালে যেটুকু সমায় পাই আমন ধানের চারা লাগাতে ব্যস্ত হই। ধান লাগামুনা কি করমু পত্রিকায় তো আগের মতন পেট চলে না। এক সময় ৪-৫জনে পত্রিকা বিলি করতাম, এখন একা করি তাই চলে না। অনলাইনের যুগে কেউ কাগজ পড়তে চায় না। জীবন-জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে হকারি করতে হচ্ছে।