জন্মভূমি ডেস্ক : কয়েক দিন ধরে চলা তাপদাহের মধ্যেই দেশের কয়েকটি অঞ্চলে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ ঝড়ে গাছপালা ভেঙে ও বজ্রপাতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলায় কমপক্ষে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত আরো বেশ কয়েকজন। বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েকশ বাড়িঘর।
গাছপালা ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ফসলের ক্ষেত। মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে বহু এলাকা।
রোববার (৭ এপ্রিল) সকালে হঠাৎ করেই শুরু হয় দমকা হাওয়াসহ ঝড়। সঙ্গে চলে বজ্রসহ বৃষ্টি। কয়েক মিনিট স্থায়ী ঝড় বৃষ্টিতে বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, খুলনার ডুমুরিয়ায় সাত জনের মৃত্যু হয়।
আজ প্রায় সব বিভাগেই বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এতে তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি পর্যন্ত কমতে পারে বলে আভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
খুলনায় বজ্রপাতে প্রাণ গেল যুবকের
খুলনায় বজ্রপাতে মো. ওবায়দুল্লাহ গাজী (২৯) নামের এক মৎস্যচাষি যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার (০৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়ার কোমলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ওবায়দুল্লাহ গাজী ওই গ্রামের মো. দেলোয়ার হোসেন গাজীর ছেলে। ডুমুরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের ফুফাতো ভাই আবু সুফিয়ান বলেন, রোববার সকালে ওবায়দুল্লাহ কানাইডাঙ্গা বিলে নিজ মৎস্য ঘেরে ঘাস কাটতে যান। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ডুমুরিয়া এলাকায় বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এসময় ওবায়দুল্লাহ নিজ ঘেরের বাসায় অবস্থান করেন। সকাল ৮টার দিকে বজ্রপাতে বাসার ভিতরে তার মৃত্যু হয়। এ সংবাদে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বিকেলে তার নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
ডুমুরিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সাহা বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঝালকাঠিতে বজ্রপাতে নিহত ৩
ঝালকাঠিতে বজ্রপাতে দুই নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- হেলেনা বেগম (৪০), মিনারা বেগম (৩৫) ও মাহিয়া আক্তার ঈশানা ( ১১)।
রোববার (৭ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে সদর ও কাঠালিয়া উপজেলায় এই ঘটনা ঘটে।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত হেলেনা বেগমের বাড়ি ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার উত্তর তালগাছিয়া গ্রামে। মিনারা বেগমের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট গ্রামে ও মাহিয়া আক্তার ঈশানার বাড়ি পোনাবালিয়া গ্রামে।
এর মধ্যে হেলেনা বেগম ও মিনারা বেগম গৃহিণী এবং মাহিয়া আক্তার ঈশানা আফসার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
পোনাবালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.ফারুক হোসেন খান বলেন, ভ্যানচালক বাচ্চুর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটি বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। আমরা ইউনিয়নবাসী এমন ঘটনায় গভীর শোকাহত।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ঝড়ের সময় মাঠে গরু আনতে গিয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় এক শিশু ও নারী এবং কাঠাঁলিয়া উপজেলায় এক নারী নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা করা হবে।
বাউফলে ঝড়ে দুইজনের মৃত্যু
পটুয়াখালীর বাউফলে ঝড়ের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ সময় রাতুল (১৪) নামের এক কিশোর ও সুফিয়া বেগম (৮৫) নামের এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন।
নিহত রাতুল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাঁতের কাঠি গ্রামের জহির সিকদারের ছেলে। তাকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে বজ্রপাতে সে মারা গেছে। আর সুফিয়া বেগম দাশপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের মৃত আহম্মেদ প্যাদার স্ত্রী। ঘরের ওপর গাছ পড়ে তিনি মারা যান।
এ ছাড়া গোসিংগা গ্রামের আফসেরের গ্রেজ এলাকায় ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে মা সাবিহা (৩০), তার মেয়ে ইভা (১২) ও দুই বছর বয়সী আরেক শিশু মারাত্মক আহত হয়েছে।
রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত ৩৫ মিনিট এ ঝড় স্থায়ী হয়। এতে বাউফলের বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক আধাপাকা বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়েছে।
এদিকে বাউফল পৌর শহরের থানার সামনে সালেহিয়া ফাজিল মাদরাসার একটি ভবনের টিনের চালা উড়ে রাস্তায় পড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া পশু হাসপাতাল রোডে গাছ ভেঙে সড়কের ওপর পড়ায় সেখানেও চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঝড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় খুঁটি ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। শিলাবৃষ্টিতে তরমুজসহ রবি ফসল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মারজান বলেন, রাতুলকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই সে মারা গেছে। তবে তার শরীরে বজ্রপাতে ঝলসানোর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে বজ্রপাতের শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতে পারে।
দাশপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে সুফিয়া বেগম মারা যান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বশির গাজী বলেন, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য কৃষি বিভাগ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পিরোজপুরে ঝড়ে একজনের মৃত্যু, লণ্ডভণ্ড বাড়িঘর
পিরোজপুরে ১০ মিনিটের কালবৈশাখী ঝড়ে কয়েকশ বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় রুবি নামে এক গৃহবধূ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে ৯টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত চলে এ ঝড়।
ঝড়ে মারা যাওয়া ওই গৃহবধূ রুবি সদর উপজেলার মরিচাল এলাকার বাসিন্দা। এ সময় তার শিশুসন্তানও গুরুতর আহত হয়।
এদিকে ঝড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পুরো জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ। গাছপালা ভেঙে পড়ে পিরোজপুরের সঙ্গে বরিশালের সড়কসহ বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, সকালে হঠাৎ চতুর্দিকে কালো মেঘ ঢেকে যায়। কিছু সময় পর তীব্র বেগে ঝড় শুরু হয়। ঝড়ে কয়েকশ বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ঝড়ে অনেকের কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে টিনের চালা উড়ে যায়। ধানক্ষেতেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। সড়ক-ঘরবাড়ির ওপর গাছপালা ভেঙে পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
কয়েক মিনিটের ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। ঝড় থেমে যাওয়ার পর স্থানীয়রা সড়ক থেকে ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে নিচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এখন পর্যন্ত রুবি নামের একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য শুকনো খাবার ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।