জন্মভূমি ডেস্ক : বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনকে কার্ল মার্ক্স ‘ডাস ক্যাপিটাল’ বই এর একটি অনুলিপি উপহার দিয়েছিলেন। বইটিতে তাঁর স্বাক্ষরও ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুইজন বুদ্ধিজীবীর মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল এবং কীভাবে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করেছিলেন তা সম্পর্কে ‘চমকপ্রদ তথ্য’ উঠে এসেছে এই বইটি থেকে। অর্থনীতিবিদ এবং দার্শনিক মার্কস পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে তা তুলে ধরেছেন তাঁর ‘ডাস ক্যাপিটাল’ বইয়ে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, পুঁজিবাদ শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী।
ডারউইনের কাছে বইটি পাঠানোর দেড়শ বছরেরও বেশি সময় পরে বিশেষজ্ঞরা এই ‘অনাকাঙ্ক্ষিত উপহার’ পুনরুদ্ধার করেন এবং সেটি এই বিখ্যাত জীববিজ্ঞানীর নিজ বাড়িতে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। মার্ক্স ১৮৭৩ সালের জুন মাসে ডারউইনের কাছে বইটি উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ডারউইনের উদ্দেশ্য লিখেছিলেন, “তাঁর আন্তরিক ভক্ত কার্ল মার্ক্সের পক্ষ থেকে।”
কিন্তু এক বিবৃতিতে ডারউইনের বাসভবন ডাউন হাউসের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা দাতব্য সংস্থা ইংলিশ হেরিটেজ বলেছে, উপহারটি “খুব ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়নি বলে মনে হচ্ছে। এর বেশিরভাগ পৃষ্ঠাই কেটে আলাদা করা হয়নি (নতুন বই এর পাতা যুক্ত থাকলে সেটিকে কেটে আলাদা করতে হয়)। তাই মনে হচ্ছে ডারউইন বইটি পড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন।”
ডারউইন মার্কসকে উপহারটির জন্য ধন্যবাদ জানাতে প্রায় তিন মাস সময় নিয়েছিলেন। তিনি মার্ক্সকে একটি নোট পাঠিয়েছিলেন যেখানে তিনি লিখেছিলেন, “পুঁজি নিয়ে আপনার অসাধারণ কাজ আমাকে পাঠিয়ে আপনি আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন তার জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। হয়ত রাজনীতি ও অর্থনীতির গভীর এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝার সক্ষমতা আমার থাকলে আমি নিজেকে এই উপহার গ্রহণ করার জন্য যোগ্য মনে করতাম।”
তিনি নোটে আরো লিখেছিলেন, “যদিও আমাদের জ্ঞানের ক্ষেত্র আলাদা, আমি বিশ্বাস করি যে আমরা দুজনই আন্তরিকভাবে জ্ঞানের প্রসার কামনা করি এবং চাই সেটি মানবজাতির আনন্দের কারণ হোক।”
ডারউইন তাঁর ১৮৫৯ সালের বই “অন দ্য অরিজিন অব স্পিসিস” এর জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এটি বিবর্তনের বৈজ্ঞানিক ধারণার সাথে মানুষের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
ইংলিশ হেরিটেজের সংগ্রহ ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ক কিউরেটর টেসা কিলগারিফ বলেছেন, তাঁরা দুইজন ছিলেন ১৯ শতকের শেষের দিকের অন্যতম সেরা দুই বুদ্ধিজীবী।
তিনি বলেন, “মার্ক্সের ব্যক্তিগত উপহার এবং পরবর্তী কাজ থেকে এটা স্পষ্ট যে তিনি ডারউইনের তত্ত্বের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু ডারউইনের বইটিতে পাতাগুলো যুক্ত থাকা এবং প্রথাগত পেন্সিলের দাগের অভাব নির্দেশ করে যে ডারউইন মার্ক্সের লেখার প্রতি কম আকৃষ্ট ছিলেন অথবা তিনি জার্মান ভাষা কম জানতেন।”
কিলগারিফ আরো বলেন, “এই দুই বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীর মধ্যে বোঝাপড়া নিয়ে আমাদের চমকপ্রদ তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি ডাউন হাউসের ডাস ক্যাপিটাল বইটি সামাজিক ইতিহাসের একটি চমৎকার অংশ। এটি থেকে জানা যায়, ডারউইনের তত্ত্বগুলো কীভাবে ভিক্টোরিয়ান সমাজে পরিশোধনের মধ্য দিয়ে গিয়ে পরবর্তীতে জীববিজ্ঞান এবং প্রকৃতির জনপ্রিয় ধারণাগুলোকে রূপান্তর করেছিল।”
ইংলিশ হেরিটেজ বিবৃতিতে ডারউইনের ছেলে ফ্রান্সিস ডারউইনের বক্তব্য তুলে ধরে জানিয়েছে, ডারউইন জার্মান ভাষা জানলেও তাঁর ছেলের বক্তব্য থেকে বোঝা যায় এই ভাষার সাথে তিনি খুব একটা মানিয়ে নিতে পারেননি। ইংলিশ হেরিটেজ মনে করে, ভাষাগত জটিলতার পাশাপাশি রাজনীতি এবং অর্থনীতির বিষয়ে ডারউইনের আগ্রহ কম থাকায় ডারউইন বইটি সম্পূর্ণ পড়ে শেষ করেননি।
বইটির বর্তমান মালিকানা রয়েছে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির কাছে। লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ বইটি সংরক্ষণ করার পর পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত ডাউন হাউসে এটি প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে।
প্রথমবারের মতো ডারউইনের হারিয়ে যাওয়া লাইব্রেরি উন্মুক্ত করল গবেষকরা ঃ ১২ ফেব্রুয়ারি ডারউইনের ২১৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি গবেষণা দল তাঁকে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্য তাঁর লাইব্রেরিটি অনলাইনে নতুন করে সাজিয়েছে। ‘ডারউইন অনলাইন প্রজেক্ট’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে এই গবেষণা দলটি। তারা ১২ ফেব্রুয়ারি ডারউইনের ২১৫ তম জন্মদিনের সম্মানে একটি ৩০০ পৃষ্ঠার ক্যাটালগ প্রকাশ করেছে। এতে ডারউইনের মালিকানাধীন ৭৪০০ বইয়ের নাম ও ১৩ হাজার বইয়ের খণ্ড রয়েছে। ক্যাটালগটিতে লাইব্রেরির বিষয়বস্তুর অনুলিপিগুলোর ৯৩০০টি লিংক রয়েছে, যা বিনামূল্যে অনলাইনে পাওয়া যাবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে ডারউইন কী কী বই পড়েছেন তা পড়ার জন্য পাঠকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।