এস রফিক, ডুমুরিয়া : চলতি অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহ ২০২৩’র ২ মাস চলে গেলেও উপজেলার একজন কৃষকও ডুমুরিয়া খাদ্য গুদামে ১ কেজি ধানও বিক্রি করেনি। কিন্তু খুলনা শহর থেকে এসে চাল ব্যবসায়ীরা মাত্র ৪২ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৯শ’ মেট্রিক টন চাল বিক্রি করায় জনমনে প্রশ্ন জেগেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে কথা বলে জানা গেছে, সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আমন ধান বা চাল কেনার লক্ষ্যে সরকার ডুমুরিয়া উপজেলাকে ধান কেজি প্রতি ২৮ টাকা দরে ৮শ’ ৯৫ মেট্রিক টন ও সিদ্ধ চাল কেজি প্রতি ৪২ টাকা দরে ৪শ’ ৮৩ মেট্রিক টন কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। আর গত ১৭ নভেম্বর থেকে ডুমুরিয়ায় অভ্যন্তরিণ আমন সংগ্রহ শুরু হয়। কিন্তু সরকারি গুদাম থেকে বাইরের বাজারে বিনা ঝামেলায় বেশি দাম পাওয়ায় কোনো কৃষকই বা ব্যবসায়ী আজাবধি গুদামে ১ কেজি ধানও বিক্রি করেনি। অপরদিকে ডুমুরিয়া উপজেলার এম.এ জামান অটোরাইচ মিলসহ ৩টি মিল খাদ্য-গুদামে ২শ’ ৫৪ মেট্রিক টন চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ থাকলেও এ পর্যন্ত মাত্র ১৩ মেট্রিক টন চাল দিয়েছে। তবে খুলনা শহরের চাল ব্যবসায়ীরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অনুমতি নিয়ে ১৬ কিলোমিটার দূরে হলেও ডুমুরিয়া উপজেলা খাদ্য-গুদামে এনে এ পর্যন্ত ৯শ’ ৬৬ মেট্রিক টন চাল বিক্রি করেছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কামরুল ইসলাম বলেন, কোনো কৃষক ধান দিতে আসেনি। আর খুলনা মহানগর থেকে চাল পেয়েছি ৮শ’ ৪৫ মেট্রিক টন। ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা তৈয়েবুর রহমান বলেন, ধানের বাজার দর ফেবারে নেই বলে কোনো কৃষক ধান বিক্রি করতে আসেনি। তবে ডুমুরিয়ার মিলগুলো থেকে ২শ’ ৫৪ মেট্রিক টন চালের লক্ষমাত্র থাকলেও চুকনগরের জামান আটো ও শাহিন রাইচ মিল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ১৩ মেট্রিক টন চাল দিয়েছে। কিন্তু খুলনা মহানগরের মিলগুলো থেকে ১ হাজার ৮০ মেট্রিক টন লক্ষমাত্রার বিপরিতে এ পর্যন্ত ৯শ’ ৬৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল পেয়েছি।
ডুমুরিয়ার ধান-চাষি মোশাররফ হোসেন কচি বলেন, ধান উৎপন্ন হয় ডুমুরিয়ায়। আর খোলা বাজারে ধানের দাম ১২ থেকে সাড়ে ১২শ’ টাকা মন। তাছাড়া চালও ৫৫-৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খোলা বাজারে বেশি দাম পাচ্ছে বলে ডুমুরিয়ার কেউ গুদামে ধান-চাল বিক্রি করছে না। কিন্তু খুলনা জেলায় ধান-চাল দেওয়ার সুব্যবসস্থা থাকলেও শহরের চাল ব্যবসায়ীরা কিভাবে বা কেনো ১৬ কিলেমিটার দূরে এসে ডুমুরিয়ার খাদ্যগুদামে বিক্রি করছে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার আবেদন জানাচ্ছি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে গুদাম থেকে যে চাল দেওয়া হয়, ওইসব চালই শহরের বিভিন্ন হাত ঘুরে নতুন রুপে গুদামে ফিরে আসছে।
খুলনা শহরের গুদামে চাল দেওয়ার সুব্যবস্থা থাকার পরও কেনো ১৬ কিলোমিটর দূরে এবং বাজার থেকেও কম দামে ডুমুরিয়ার গুদামে দিচ্ছেন, জানতে চাইলে খুলনা মহানগর মিল মালিক সমিতির সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, আমার মিল থেকে ডুমুরিয়ায় পাঠানো সোজা। আর সরকার বিপদে পড়বে, তাই লস হলেও আমরা সব সময় চাল দেই। তবে খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাজুল ইসলাম বলেন, আমি তো নতুন এসেছি, তাই কেনো ডুমুরিয়ার ব্যবসায়ীরা ধান-চাল দিতে না পারলেও খুলনা শহরের চাল ব্যবসায়ীরা ডুমুরিয়ার গুদামে দিচ্ছে, বিষয়টি একটু বুঝতে হবে।