শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : খুলনার ডুমুরিয়ায় ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচী (মিসিপি) জলবায়ু জনিত ঝুঁকিতে থাকার কারণে কোভিড-১৯ এর ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সহায়তা ও সহ কৃষি অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে “কোভিড-১৯ প্রভাবিত জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ কৃষকদের দুগ্ধ, শস্য ও সবজি চাষে জড়িতদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা দুগ্ধ খামারিদের জন্য প্রয়োজনীয় ইনপুট ভিত্তিক সহায়তা প্রয়োজন” এর ইমার ডুমুরিয়া প্রক্রিয়া প্রকল্পের খুলনা প্রযুক্তি উপজেলায় ১২৬ জন সুবিধাভোগী দুগ্ধ খামারদের প্রয়োজন অনুযায়ী খামার অস্ত্র উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় ডুমুরিয়া টিপনা ভিলেজ সুপার মার্কেট চত্বরে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল কবির, উপস্থিত ছিলেন ডুমুরিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শেখ মাহতাব হোসেন, সাংবাদিক আশরাফুল আলম,মোঃ ওয়ালিউল্লাহ সরকার – সিপি: খুলনা। মিঠুন কান্তি রায়, দেবব্রত হালদার ও মোঃ মহব্বত উল্লাহ প্রমুখ।
উল্লেখ্য প্রথমত, জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করা যেহেতু সম্ভব নয়, সেহেতু উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির দিকেই নজর দিতে হবে। ক্রমবর্ধমান দুধ ও মাংসের চাহিদা মেটাতে উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি অধিক উৎপাদনশীল উন্নত জাতের গাভী লালন-পালন করা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত ভালো মানের একটি গরু দিনে ৬২ লিটার দুধ দেয়। আমেরিকায় গড়ে প্রতিটি গরু ৫২ লিটার দুধ দেয়। আমাদের খামারগুলোয় গড়ে প্রতিটি গরু পাঁচ-ছয় লিটার দুধ দেয়। এর বাইরে যে গরু আছে, সেসব দু-তিন লিটার দুধ দেয়। খামারে দেশী জাতের গরু রয়েছে ৮৫ শতাংশ। সংকর জাতের আছে ১৫ শতাংশ। সংকর জাতের গরুর সংখ্যা বাড়াতে পারলে দুধের উৎপাদন বাড়বে। গত পাঁচ বছরে লিটারপ্রতি দুধের উৎপাদন ব্যয় কমেছে। সংকর জাতের গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ খরচ কমেছে। কিন্তু এখনো সব খামারির কাছে সংকর জাতের গরু নেই। কৃষক পর্যায়ে এ জাতের গরু পৌঁছে দিতে পারলে দুধের উৎপাদন খরচ আরো কমবে। তখন ভোক্তারাও কম দামে দুধ ক্রয় করতে পারবে। এছাড়া আমাদের দেশে অস্ট্রেলিয়ান, জার্সি, ন্যাড়ামুন্ডো, হরিয়ানা ও সিল্কি জাতের গাভী বেশি পালন করা হয়। যদি কানাডা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকার মতো দেশ থেকে উন্নত জাতের বীজ আনা যায়, সেক্ষেত্রে খামার ব্যবসায়ীরা আরো বেশি উপকৃত হবেন। তখন দুধ উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর হাই-টেক ডেইরি খামার স্থাপন করে দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছে। আমাদেরও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন হাই-টেক খামার স্থাপনে উদ্যোগ নিতে হবে।বর্তমানে দেশে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান ও নারীর ক্ষমতায়নে একটি সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে ডেইরি শিল্প। মিল্ক ভিটা, আড়ংয়ের মতো পরবর্তী সময়ে ডেইরি খাতে প্রাণ ডেইরি, ফার্ম ফ্রেশসহ প্রায় আটটি বড় কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগেও প্রতিষ্ঠিত হয়ে চলেছে গবাদি পশু লালন-পালনের বাণিজ্যিক খামার। দেশে বর্তমানে এক লাখেরও বেশি নিবন্ধিত খামারি রয়েছেন, যার প্রায় অর্ধেকই উচ্চ শিক্ষিত যুবকদের উদ্যোগে পরিচালিত। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলসহ বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে একসময় খামারিরা নিজেরা দুধ সংগ্রহ করে তা স্থানীয় ভোক্তার কাছে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে আসতেন, ছিল না কোনো উন্নত প্যাকেজিং ব্যবস্থা। ফলে দুধের অপচয়ও হতো বেশি। নষ্ট হওয়া এড়াতে দুধ থেকে দই, ঘি, ছানা তৈরি করে বিক্রয় করা শুরু হয়। আবার মিষ্টান্ন প্রস্তুতিতেও ছবিবিভিন্ন মিষ্টির দোকানে দুধ আর ছানার চাহিদা রয়েছে। ডেইরি কোম্পানিগুলো গড়ে ওঠার পর খামারিরা পেয়েছে সুসংঘবদ্ধ হওয়ার সুযোগ, সেই সঙ্গে রক্ষা পেয়েছে দুধের গুণগত মান। ক্রমে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে এসেছে পরিশোধন ব্যবস্থা, পাস্তুরিতকরণ, ম্যাটেরিয়ালে প্যাকেজিং ব্যবস্থা, দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখার ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত চিলিং স্টেশন ও উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা। প্রাণ ও মিল্ক ভিটা গুঁড়ো দুধ তৈরির শিল্পও গড়ে তুলেছে। ফলে গুঁড়ো দুধ আমদানির চাহিদা কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় শিল্পে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
গত এক দশকে দেশে উৎপাদিত দুধের পরিমাণ প্রায় ৪ দশমিক ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে গবাদি পশুর মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় সাত গুণ। কোরবানির ঈদে নিজস্ব উৎপাদন দিয়েই গরুর চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছি আমরা। দেশে দুধের মোট চাহিদার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই এখন দেশীয় উদ্যোক্তারা সরবরাহ করছেন। খামার ব্যবসায়ীদের মতে, উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারের পাশাপাশি ডেইরি শিল্পসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, যেমন দুগ্ধ খামারি, দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত ও বিপণন প্রতিষ্ঠান, গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজননকারী প্রতিষ্ঠান, প্রাণিখাদ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক, ব্যবসায়ী সংগঠন, গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।
ডুমুরিয়ায় ডেইড়ী খামারীদের গোখাদ্য ও উপকরণ বিতরণ
Leave a comment