জি এম ফিরোজ, ডুমুরিয়া : কিছুতেই মাঝবয়সী কাঞ্চন বালা গোলদারের কান্না থামাতে পারছেন না স্বজন। বার বার বিলাপ করে বলছেন, ’আমার দাদুর (অরিজিত ঢালী) কি হবে কাকে মা বলে ডাকবে। আমি কাকে মা ডাকব। ভগবান কেন আমার মেয়েকে কেড়ে নিল।’ আর বার বার স্বজনদের কাঁধে হেলে পড়ছেন কাঞ্চন বালা। এমন চিত্র দেখা গেছে রোববার সকালে খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার কৈয়া মহাশ্মশানের বটগাছের বেদীতে। শুধু কাঞ্চন বালা নয়, কান্না থামছে না বিশ^জিত বিশ^াসের স্বজনদের। শনিবার বিকেলে খুলনা- সাতক্ষীরা মহা সড়কের আঙ্গাদহা নামক স্থানে ইটবাহি একটি ট্রাকের ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ইজিবাইকের চালক বিশ^জিত বিশ^াসসহ নিহত হন একই পরিবারের চারজনসহ ৫জন।
স্থানীয় এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও নিহতের স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের জিয়েলতলা গ্রামের বিশ^জিতের বাড়িতে বেড়াতে যান তার শ^াশুড়ি অমরী ঢালী, শ্যালকের স্ত্রী নীপা ঢালী, শ্যালকের ছেলে অরিজিৎ ঢালী। তাদেরকেসহ বিশ^জিতের স্ত্রী অন্তিমা বিশ^াস ও ৪ বছরের মেয়ে অরনী বিশ^াসকে নিয়ে একটি বিশেষ প্রয়োজনে চুকনগর বাজারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরছিলেন তারা। পথিমধ্যে মোঃ সাব্বির মোড়ল নামে এক যুবক আঙ্গারদোহা গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরতে বিশ^জিতের ওই ইজিবাইকে উঠেছিলেন। ইজিবাইকটি আঙ্গারদহা ব্রীজের নিকট পৌঁছালে খর্নিয়া অভিমুখে যাওয়া দ্রুতগামি একটি ট্রাক ইজিবাইককে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই দুজনসহ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও তিনজন। আহত হন বিশ^জিতের স্ত্রী অন্তিমা বিশ^াস ও অরিজিত ঢালী। শনিবার রাত ১২ টার দিকে তাদের দুজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সেখানে ওই দুজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে কুলবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত পুস্পক সরদারের মালিকানার এমএসবি ব্রিক্সের ওই ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন ভাটার সাজু আহমেদ নামে ভাটার একজন শ্রমিক। এ বিষযে জানতে পুস্পক সরদারের ব্যক্তিগত সেলফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অপরদিকে শনিবার রাতে নিহত বিশ^জিত ও তার শিশুকন্যা অরনী বিশ^াসের মরদেহ জিয়েলতলা শ্মাশানে সৎকার করা হয়। রোববার সকালে গুটুদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বিলপাবলা গ্রামের বাড়ি থেকে অমরী ঢালী ও নিপা ঢালীর মরদেহ আনা হয় বটিয়াঘাটা উপজেলার কৈয়া শ্মশানে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অপি ঢালী (বিশ^জিৎ বিশ^াসের শ্যালক) এর স্ত্রী নিপা ঢালীর পিতা বটিয়াঘাটার রাঙ্গোমারী গ্রামের গোপাল চন্দ্র গোলদার, মা কাঞ্চন বালা গোলদার, বিশ^জিতের স্বজনসহ প্রতিবেশি ও গ্রামের অনেক নারী পুরুষ। ওই শ্মাশানে সকল ধর্মের নারী পুরুষ এসেছিলেন নিহতদের এক নজর দেখতে। কৈয়া শ্মশান ঘাটের দুটি বেদিতে শ^াশুড়ি ও পুত্রবধূকে পাশাপাশি শুইয়ে হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ি শেষ কৃত্যানুষ্ঠানের অংশ হিসেবে স্নান করিয়ে পাশাপাশি দুটি চিতায় দাহ করা হয়।
এদিকে খুলনা- সাতক্ষীরা এই সড়কটির খুলনা থেকে চুকনগর পর্যন্ত অত্যন্ত বেশী যানবাহন চলাচল করে। বিশেষ করে ভাটার মাটি ও ইটবহনের জন্য অনেক ট্রাক চলাচল করে। তাছাড়া প্লট ব্যবসয়ীদের নীচু জমি ভরাট করতে ১০ চাকার ডাম্পার ট্রাকে করে বালি আনা হয়। ট্রাকগুলি সকড়ের উপরে আড়াআড়ি করে রেখে বালি ফেলা হয়। যাতে যানবাহন চলাচল করে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। বালি ও মাটিবাহি এসব ট্রাকের অধিকাংশই রেজিস্ট্রেশন বিহীন ও কোন পেশাদার চালক এসব ভারী ট্রাক চালান না বলে অভিযোগ রযেছে।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মোঃ ইব্রাহিম খলির জানান, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হ্ইাওয়ে পুলিশ সার্বক্ষনিক তদারকি করে থাকে। বেআইনী ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন এসক যানবাহন চলাচল বন্ধের জন্য অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
ডুমুরিযা থানার অফিসার ইনচার্জ সুকান্ত সাহা জানান, নিহতের এই ঘটনায় শনিবার রাতে অমরী ঢালীর পরিবারের এক সদস্য বিশ^জিত কুমার ঢালী বাদী হয়ে মোটর যান আইনে অজ্ঞাতনামা চালক উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন্ মামলাটি তদন্ত করছে হাইওয়ে পুলিশ। তিনি জানান, ট্রাকটি হাইওয়ে থানা পুলিশের হেফাজতে রযেছে।
ডুমুরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ মৃত্যূ: থামছে না কান্না নিপা ঢালীর মা কাঞ্চনবালার
Leave a comment