গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : সরকারি পৃষ্টপোষকতার অভাবে তালা উপজেলায় আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে চাষীরা। একসময় উপজেলার সর্বত্রই মাঠের পর মাঠ আখ চাষ হতো। আখ বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম। কৃষকের অতীত ঐতিহ্যের ধারক বাহক হিসেবে এলাকার চাষীরা আখ চাষে বেশ সফলতা অর্জন করতেন। কৃষকের নায্য দাম আর অনুকুল পরিবেশ না থাকার কারণে তালায় আখ চাষ বিলুপ্ত প্রায়। বেশ কয়েক বছর আগেও আখ চাষ কৃষকের নিকট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শীতের মৌসুমের শুরুতেই আখ মাড়াই শুরু হয়ে যেত। চাষীরা আখ মাড়াই করে রস জালিয়ে গুড় পাটালী তৈরী করত।
এক সময় সনাতন পদ্ধতিতে গরু দিয়ে আখ মাড়াই করা হত মাঝ রাত হতেই শুরু হয়ে যেত আখ কেটে রস বের করার কর্মকৌশল। দেখা যেত দু’একটি বাড়ি ছাড়া গ্রামাঞ্চলের সকল বাড়িতে এই শীত মৌসুমে ব্যস্থতার সাথে আখ মাড়াইয়েই সময় অতিবাহিত করত। বিশেষ করে গ্রামের মাঠ গুলোতে যেন আখ মাড়াইয়ের হিড়িক পড়ে যেত। আখ মাড়াইয়ের কথা আজকের দিনে সেটি একেবারেই রূপকথার মতো মনে হয়। বর্তমানে বাজারে বিক্রিত একপিচ আখের মুল্য ৫০-৬০টাকা।
জুজখোলা গ্রামের আব্দুল আলিম মোড়ল জানান, আখ চাষ করে আমরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক সফলতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু বর্তমানে লাভ না থাকায় আখচাষে আগ্রহ হয় না।
খলিষখালী গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, আখ চাষ কান্ড পচা ও মাজরা রোগের কারনে কৃষকরা এখন আর আখ চাষ করতে চায় না। সরকারীভাবে যদি কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করানো হয় তাহলে আবারো কৃষক আখ চাষে ফিরে আসতো। আখ চাষে একদিকে পরিবারের সারা বছরের জ্বালানী ও মিষ্টির চাহিদা মেটাত। আরেক আখচাষী কওছার আলী জানান, আখচাষে অধিক পোকার আক্রমণ, বছরে এক ফসলী, মাড়াই কলের অভাব ও অন্য ফসলের চাইতে অলাভজনক হওয়াতে তালার কৃষকরা আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। তা জেনেও আমরা দুই বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছি মাড়াই না করা পর্যন্ত লাভ লোকসান বোঝা যাবে না।
আখচাষী সেলিম সরদার ইসলাম জানান, আখচাষ তেমন না হলেও গতকয়েক বছর সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত অমৃত ৪১ ও অমৃত ৪২ জাতের আখ চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। এক বিঘা জমিতে আখচাষ করে তিনি প্রায় এক লক্ষ টাকার কাাঁচা আখ বিক্রি করেছেন।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, আখ চাষ এক বছর মেয়াদি হওয়ায় চাষিরা আগ্রহ হারাচ্ছেন আখ চাষে। তালা উপজেলায় ৫৮ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। যেখানে একই জমিতে বছরে তিনটি ফসল করতে পারে সেখানে এক বছর মেয়াদি আখ চাষ করতে চাচ্ছেন না কৃষকরা। এছাড়া মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা রোগের প্রতিকারের জন্য কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
তালায় আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে চাষিরা

Leave a comment