গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : ভাষা আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি হলো শহীদ মিনার। ১৯৫২ সালে মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়ার ৭২বছর পার হলেও তালা উপজেলার ৩২৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্য প্রায় ২৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার কিংবা স্মৃতিস্তম্ভ।
তালা উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩৫টি মাদ্রাসা, ১৩টি মহাবিদ্যালয় ও ২১১ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ৫টি মহাবিদ্যালয়, নন এনপিও ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩৫টি মাদরাসা এবং ১৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোনো শহীদ মিনার।
তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গাজী সাইফুল ইসলাম জানান, ২১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৪০টি শহীদ মিনার রয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরী করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিঠি দেওয়া আছে। কিন্তু কোন বরাদ্দ না থাকায় শহীদ মিনার করা সম্ভব হয়নি।
তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মফিজ উদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশের সব আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার ভাষা আন্দোলন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে ভাষা আন্দোলনের ৭২বছর পার হলেও তালা উপজেলাসহ দেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি।
কপোতাক্ষ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি জগদীশ চন্দ্র হালদার বলেন, সরকারের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের চেষ্টা করা হবে। তবে শহীদ মিনার না থাকলেও সকল ধরণের জাতীয় দিবস বিধিমোতাবেক পালন করা হয়ে থাকে।
তালার আটারই বারুইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ ফরিদ উদ্দীন বলেন, কয়েক দফা সরকারের পক্ষ থেকে চাহিদাপত্র নিলেও কোনো বরাদ্দ আসেনি। সে কারণে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়নি।
সূত্রে প্রকাশ, সরকারি নির্দেশনা আছে দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করার। কিন্তু তালা উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি আজও। উপজেলা সদরে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে তার শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে। বাকি অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি’ এই গানটি শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে গাইতে পারে না। তাই কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কলাগাছ, বাঁশ, কাঠ, আর কাগজ-কাপড়ে তৈরি করা অস্থায়ী শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে তালা উপজেলার শিক্ষার্থীদের। আবার যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার আছে, শুধু ফেব্রুয়ারী মাস এলেই সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। বাকি মাসগুলোতে শহীদ মিনার চত্বর বছর পর বছর অযত্ন-অবহেলায় ময়লা, আবর্জনা,ধূলা বালিতে পরিপূর্ণ থাকে।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা গাজী আব্দুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ নামক ভুখন্ডের সকল আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার শহীদ মিনার। আমাদের দুর্ভাগ্য যে ভাষা আন্দোলনের ৭২বছর আর দেশ স্বাধীনের ৫৩বছর পার হতে গেছে কিন্তু তালা উপজেলাসহ দেশের শতভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধার পক্ষের সরকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরধাকারী। তিনি যদি প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার করার উদ্যোগ নেন তাহলে হয়ত আমি মৃত্যুর আগে শহীদ মিনারগুলো দেখে যেতে পারবো।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হেল্প (সাহায্য) এর সভাপতি এসএম হাসান আলী বাচ্চু বলেন, উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকাটি দু:খের বিষয়। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে না। অতিদ্রুত উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মণি করা হোক। এটা আমাদের প্রত্যাশা।
তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেখ ফিরোজ আহমেদ জানান, জায়গা সংকটের কারণে কিছু কিছু স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। তবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে। যেন স্কুল পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীরা মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। যে সকল প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সে সকল প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। শহীদ মিনার না থাকলেও সকল প্রতিষ্ঠানে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়।
তালায় দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার
![](https://dainikjanmobhumi.com/wp-content/uploads/2024/02/22-02-2024-28-330x220.jpg)
Leave a comment