তালা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার তালায় ধর্ষক ছেলেকে বাঁচাতে পিতা কর্তৃক ছেলের ছাপড়া ঘরে আগুন জ্বালিয়ে ধর্ষিতার পরিবারসহ ৯ জন এলাকাবাসীর নামে আদালতে মামলা করেছে। তালা থানা অফিসার ইনচার্জকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় আদালত। মামলা নং সিআর ৯৭/২৫ তারিখ ২৮/০৩/২০২৫।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২৭ মার্চ রাতে নলতা গ্রামের শরফুল মোড়লের ছেলে শহিদ মোড়ল (২৮) তার আপন চাচী (৫৫)কে চেতনানাশক ঔষধ খাইয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনা জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ধর্ষকের পিতা শরফুলের কাছে বিচার চাইলে সে নিজেই ধর্ষক ছেলেকে ঘর বাড়ি উচ্ছেদ করে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এলাকাবাসী জানাই, এসময় শরফুল নিজেই তার ছেলের একটি ছাপড়া ঘর ভাংচুর সহ নিজের পকেট থেকে গ্যাস লাইট বের করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
নলতা গ্রামের ওদুদ সরদার, ইমরান হোসেন, রফিকুল মোড়ল, নাছির মোড়ল, লিমা বেগম, শফিকুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, শরফুলের ছেলে একজন চিহ্নিত ও পেশাদার চোর। তার বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, ধর্ষনের অভিযোগে একাধিক মামলা ও রয়েছে।
এলাকাবাসী আরও জানায়, চাচীকে ধর্ষণের ঘটনার পরপরই শরফুল নিজে বাঁচতে ছেলের বিরুদ্ধে সকল অপকর্মের এক ফিরিস্তি বানিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশ ও ইউপি সদস্য জিয়া কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি নন-জুডিশিয়াল ষ্টাম্প করে গনস্বাক্ষর করে, ধর্ষক ছেলেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এলাকাবাসীর তোপের মুখে সুচতুর শরফুল সুপারীপাতার বেড়া ও ছাপড়া ঘরে আগুন দেয়। এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলায় পুলিশ ধর্ষক শহীদ গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। অপরদিকে ধর্ষক ছেলেকে বাঁচাতে শরফুল তার ২৫ বছর পুর্বে তালাক দেওয়া স্ত্রী তানজিলা বেগমকে বাদী বানিয়ে আদালতে ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগে ধর্ষিতার পরিবার সহ এলাকাবাসীর নামে মামলা করেছে।
ধর্ষিতার মেয়ে লিমা বেগম জানান, ২৭ রমজান, শবেকদরের রাতে শারফুলের ছেলে শহিদ আমার মায়ের সাথে অশালিন আচারণ করে। আমি খবর পেয়ে সকালে আসি এবং আমার চাচা শারফুলের কাছে ঘটনা জানতে চাই। তখন আমার চাচা বলে শহিদকে আমি ছেলে বলে পরিচয় দিইনা। ওর জন্য আমি সমাজে চলাফেরা করতে পারছি না। আমি ওকে কিছু বলতে পারব না। তোরা এক কাজ কর ওর ঘরবাড়ি ভেঙ্গেচুরে দে, এখান থেকে চলে যাক। ওর অপকর্মের জন্য আমি তো লিখিত দিয়েছি ও আমার ছেলে না। এই বলে চাচা আমাকে সাথে নিয়ে শহিদের ঘরের কাছে যায় এবং আমাকে বলে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে আগুন ধরিয়ে দে। বলে পকেট থেকে গ্যাস লাইট বের করে দেয়। আমার মায়ের অপমান সইতে না পেরে চাচা আর আমি আগুন ধরিয়ে দিয়েছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান জানান, শরিফুলের ছেলে শহীদ ছোটবেলা থেকে চুরি, লম্পটি করে বেড়ায় । হাত,পা বেঁধে আপন চাচী কে ধর্ষণের মতো অপকর্মের শাস্তি দাবী করেন তিনি।
খলিলনগর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই মোঃ শহর আলী জানান, আদালত থেকে আমার উপর তদন্ত ভার দেওয়া হয়েছে। আমি সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দিব। এই মামলায় নির্দোষ মানুষ সাজা পাক এটা আমি চাইনা।
তালা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ শাহিনুর রহমান জানান, আমালতে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত আসছে। আমি সেই তদন্তভার খলিলনগর ক্যাম্প ইনচার্জ এস আই শহর আলীকে দিয়েছি। তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালায় ধর্ষককে বাঁচাতে এলাকাবাসীর নামে ঘর জ্বালানো মামলা!

Leave a comment