তালা প্রতিনিধি : তালা উপজেলার শুভাষিনী জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে অপমানিত হয়ে চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছেন জলিল শেখ নামক এক রাজমিস্ত্রী। উক্ত জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনা নিয়ে এলাকাজুড়ে আলোচনার ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, শুভাষিনী গ্রামের জিল্লুর রহমান শেখের ছেলে জলিল শেখ(৩৫) গত ১ এপ্রিল রাত আনুমানিক ৩-৪টার দিকে বাড়ির সামনের আম গাছে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ভোর রাতে জলিলের স্ত্রী জোহরা বেগম তার স্বামীকে পাশে দেখতে না পেয়ে ঘরের বাইরে এসে আম গাছে ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। পরক্ষণে স্ত্রীর ডাক ও চিৎকারে পরিবারের বাকি সদস্যরা এসে গাছ থেকে লাশটি নিচে নামিয়ে গ্রাম ডাক্তার দেখালে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তালা থানা পুলিশ এসআই দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লাশ ময়নাতদন্তের শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। এ পর্যন্ত জলিলের মৃত্যুর ঘটনা স্বাভাবিক ছিল নাকি অন্যকিছু তা নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। জলিলের মৃত্যুর ১-২ দিন পরে তার ছেলে ঘরের ভিতর পিতা জলিলের লেখা একটি চিরকুট খুঁজে পান। সেখানে তার আত্মহত্যার কারণ উল্লেখ করে গেছেন।
চিরকুটে তিনি তার মৃত্যুর জন্য দায়ী হিসেবে কয়েকজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন এবং তিনি লিখে গেছেন, ‘জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে তার বাড়ি সামনের বেড়া, ঘর ভেঙে ও গাছ কর্তন করে নিয়েছে এলাকার কিছু ব্যক্তি। তাদের নামে আদালতে মামলা করায় মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে তার পিতা ও তাকে অপমান করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাহির করে দেওয়া হয়। প্রতিনিয়ত তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের জীবনাশের হুমকি প্রদর্শন করেন। তাই সে অপমান সহ্য করতে পেরে আত্মহত্যা করেছেন। তার মৃত্যুর জন্য দায়ী চিরকুটে উল্লেখ করা ব্যক্তিরা।’
জলিল শেখ মৃত্যুর আগে চিরকুটে যাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন তারা হলেন খলিল মোড়ল, আক্কাজ মোড়ল, মতিয়ার মাষ্টার, সাইদ মোড়ল, জাহিদ মোড়ল, কপিদুল মোড়ল, ড্যানি মোড়ল, আজিত খাঁ, মজিবার মোড়লসহ কয়েকজন।
জলিলের পিতা জিল্লুর রহমান জানান, ‘আমার শ্বশুরের দেয়া ১১শতক জমির উপর বসত ভিটা নির্মাণ করে আনুমানিক ৩৫/৪০বছর বসবাস করি। হঠাৎ করে কিছু দিন আগে আমার প্রতিবেশি আমাদের উপর আচমকা ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলে জলিল শেখের বাড়ির ভাংচুর করেন। তারা হলেন একই এলাকার খলিল মোড়ল, জাহিদ মোড়ল, সাইদ মোড়ল, আজিজ খাঁসহ কয়েকজন। পরে আমাকে ও ছেলে জলিল শেখ মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে তাকে বিভিন্নভাবে অপমানজনক কথা বলায় এবং মারধর করায় এই অভিমানে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।’
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চৌধুরী রেজাউল করিম জানান, আত্মহত্যাকারী জলিলের মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। তার মৃত্যুতে তালা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। চিরকুটের বিষয় সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে অবগত হয়ে মামলা তদন্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।