তালা প্রতিনিধি : তালা উপজেলার মেলা বাজার এলাকায় কপোতাক্ষ নদে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনের কারণে মেলা বাজার-মাঝিয়াড়া সংযোগ পাকা রাস্তাসহ ভাঙ্গন সংলগ্ন তিনতলা বাড়ীটি ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অতিসত্বর ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে যে কোন সময় রাস্তা,মন্দিরসহ তিনতলা বাড়ীটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে বির্স্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানাযায়, কপোতাক্ষ নদে মেলা বাজার এলাকার ভয়াবহ ভাঙ্গনের থেকে গুরুত্বপূর্ণ পাকা রাস্তাসহ মন্দির ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য আপৎকালীন জরুরী প্যকেজে-১ এর মাধ্যমে গাছ দিয়ে পাইলিং ও মাটি দিয়ে ভরাট করার জন্য ২৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ‘মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজ’ কেশবপুর নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভাঙ্গন রোধে ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাইলিং ও মাটি ভরাটের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে পাইলিং ও মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু সপ্তাহ পার না হতেই পাইলিংসহ পাকা রাস্তার সিংহভাগ নদী গর্ভে চলে গেছে।
সূত্রটি আরো জানায়, কপোতাক্ষ নদের ভয়াবহ ভাঙন থেকে পাকা রাস্তাসহ মন্দির ঘরবাড়ী রক্ষার জন্য আবারও আপদকালীন জরুরী প্যকেজে-২ বালির বস্তার ডাম্পিংয়ে ২৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজ কে ২৭ লক্ষ টাকায় ৭ হাজার ২শ বালুর বস্তা ডাম্পিংয়ের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে,যার কাজ চলমান।
বুধবার (৩০ আগষ্ট) কপোতাক্ষ নদের মেলাবাজার ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা মেলেনি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কর্মকর্তাসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোন লোককে। এসময় ব্যবসায়ী কাশেম আলীসহ স্থানীয় লোকজন নদীর ওপারে বালুর ভর্তি বস্তা গুলো দেখিয়ে বলেন, কিছু বস্তায় বালি ভরাট করে রাখা হয়েছে। আর মেলা বাজার- মাঝিয়াড়া সংযোগ রাস্তার মুখে বালু ও আরও কিছু বালু ভর্তি বস্তা এবং মোড়ের একটি দোকানের ভিতর রাখা বস্তা গুলো দেখান এপ্রতিনিধিকে।এসময় তারা আক্ষেপ করে বলেন, জনগুরুত্বপূর্ন মেলা বাজার- মাঝিয়াড়া সংযোগ রাস্তাটি নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষার জন্য পাইলিং ও মাটি ভরাটের জন্য সরকার ২৯ লক্ষ টাকা দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে নিম্নমানের পাইলিং ও মাটি ভরাট করার কারণে সপ্তাহ না যেতেই পাইলিংসহ পাকা রাস্তাটি নদীতে চলে গেছে।
এসময় তারা আরো বলেন,এখন শুনছি বালুর বস্তা দিয়ে নাকি ডাম্পিং করবে। সেখানে নাকি আরো ২৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এত টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পরেও ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে কখন যে মন্দিরসহ ঘরবাড়ী নদীতে মিশে যায় সেই আশংকায় রয়েছেন তারাসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, বালুর বস্তায় ১৭৫ কেজি করে বালু দেয়ার কথা থাকলেও দিচ্ছে অনেক কম, তাই এই বালুর বস্তার ডাম্পিং কোনো উপকারে আসবে বলে মনে হয় না। সরকারের এত টাকা বরাদ্দের পরেও কাজের ধীরগতির ও নিম্মমানের পাইলিং এর কারণে রাস্তাটা চলে গেলো নদীতে। এখন রাস্তার বাঁধ যে টুকু আছে দ্রুত ডাম্পিং করে রাস্তাটি সংস্কার না করা বাকি রাস্তাসহ, মন্দীর, ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে বির্স্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকায় দিন কাটছে তাদের।
এবিষয়ে ঠিকাদার আব্দুল মতিন বলেন, আপৎকালীন জরুরী প্যকেজের-১ পাইলিং ও মাটি দিয়ে ভরাটের কাজ করেছেন। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই পাইলিংসহ পাকা রাস্তাটি নদীতে ডেবে গেছে। এখন আপৎকালীন জরুরী প্যকেজের-২ এর মাধ্যমে ডাম্পিং এর করার কার্যাদেশ পেয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে ভাঙ্গন এলাকায় ৫শ’ বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। বালীর বস্তা ভরাটের কাজ চলছে আগামী ১৫ দিনের ভিতর বাকী বস্তা গুলো ফেলে ডাম্পিং এর কাজ শেষ করা হবে বলেও জানান তিনি।
ঠিকাদার আব্দুল মতিন আরও বলেন, আপৎকালীন জরুরী প্যকেজের-১ পাইলিং ও মাটি দিয়ে ভরাটের কাজ করেছেন। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই পাইলিংসহ পাঁকা রাস্তাটি নদীতে ডেবে গেছে। এখন আপৎকালীন জরুরী প্যকেজের-২ এর মাধ্যমে ডাম্পিং এর করার কার্যাদেশ পেয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে ভাঙ্গন এলাকায় ৫শ বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। বালির বস্তা ভরাটের কাজ চলছে আগামী ১৫ দিনের ভিতর বাকী বস্তা গুলো ফেলে ডাম্পিং এর কাজ শেষ করা হবে বলেও জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিরুল ইসলাম জানান, তালা উপজেলার মেলাবাজারের সন্নিকটে কপোতাক্ষ নদের তীরে ভাঙ্গন রোধে আপৎকালীন জরুরী প্যাকেজের আওতায় প্রথমে ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গাছ ও বাঁশ দিয়ে পাইলিং করলেও সেটা টেকেনি। একই জায়গায় আবারও আপদকালীন জরুরী প্যাকেজের ২৭ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৭২০০ বালুর বস্তা দিয়ে ডাম্পিং করা হচ্ছে। বস্তায় বালুর পরিমাণ কমের বিয়য়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখন বস্তায় বালু ভরা হচ্ছে। এই কাজ শেষে আমরা ওজন করে নির্দেশনা দিলে সেলাই করে বাঁধ দেয়া হবে। এছাড়া প্রকল্প মনিটরিংয়ের জন্য এমপি সাহেবের প্রতিনিধি বীরমুক্তিযোদ্ধা মইনুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি তালা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সন্জয় বিশ^াস বলেন, আমাদের কমিটিতে রাখা হলেও কাজের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এমনকি ইস্টিমেটও দেয়া হয়নি। শুধু একদিন বালুর বস্তা গণনার জন্য তাদের ডাকা হয়েছিল।
তালায় লক্ষ লক্ষ টাকার প্রকল্প নদীগর্ভে, জনদূর্ভোগ চরমে!
Leave a comment