নদীর উপর ভাঁঙা-চোরা সাঁকো। তারপরও প্রতিনিয়ত শত শত মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে, পার করছে সাইকেল, ভ্যান, ইঞ্জিন ভ্যান ও মটরসাইকেল। প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষকে ঝুঁকি নিতে বাধ্য করছে। এমনই বিড়ম্বনার দৃশ্য দেখা যায় তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের শালিখা-কাটিপাড়া সড়কের কপোতাক্ষ নদীতে সাঁকো পারাপারের সময়। জনগুর”ত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে ব্রীজ না থাকায় প্রতিনিয়ত জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ শালিখা-কাঁটিপাড়া সড়কটি দিয়ে খেশরা, জালালপুর ও মাগুরা ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ কাঁটিপাড়া বাজার, বাঁকা বাজার, পাইকগাছা, কয়রা, আশাশুনি উপজেলা ও সাতক্ষীরা জেলা শহরে যাতায়াত করে থাকে। ব্রীজের অভাবে তাদেরকে অনেক কষ্ট শিকার করতে হয়। ভুক্তভোগি এলাকাবাসী একটি ব্রীজ নির্মাণে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
জানা গেছে, তালা উপজেলার খেশরা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদ নব্বয়ের দশকে ভরাট হয়ে সর” খালে পরিণত হয়। ১৯৯৮ সালে খেশরা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান এমএম ফজলুল হক ও বাডুলী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের উদ্যোগে এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এ সময় জনসাধারনের চলাচলের সুবিধার জন্য ঐ স্থানটিতে পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়। ২০১৩ সালে পাখিমারা টিআরএম ও কপোতাক্ষ পুন:খনন প্রকল্পের আওতায় এই নদীটি খনন করার সময় রাস্তাটি ভেঙে ফেলা হয়। তখন থেকে জনগণের দুর্ভোগ শুর” হয়। জনসাধারণের সাময়িক চলাচলের জন্য স্থানীয় জনগণ খেশরা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান এসএম লিয়াকত হোসেন ও খেশরা পুলিশ ক্যাম্প ইনচাজের্র সমন্বয়ে একটি ঘাঁট কমিটি তৈরি করে নিজেদের অর্থায়ানে সেখানে সাঁকোটি তৈরি করেন। এদিকে মাল বোঝাই যানবাহন আনা-নেওয়া ও টোল দেয়ার ভয়ে অনেকেই শুকনো মৌসুমে শালিখা কলেজের সামনে দিয়ে বিকল্প মাটির রাস্তা হয়ে চলাচল করে। এতে তাদের সময় বেশি লাগে এবং খরচ বেশি হয়। আর বর্ষা মৌসুমে সাঁকো পারাপার ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
শিক্ষক আব্দুল হক মোড়ল, শফিকুল ইসলাম, ভ্যান চালক শহীদ গাজী, বাবু মোড়ল, ইঞ্জিনভ্যান চালক পীর আলী গাজী, আসাদুল সরদার, ইজিবাইক চালক বাপ্পী গাজী, রেজাউল সানাসহ কয়েকজন পথচারী বলেন, ব্রীজ না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করতে খুব অসুবিধা হয়। কাঁটিপাড়া ও বাঁকা বাজার থেকে জিনিসপত্র আনতেও ঝামেলা হয়। এছাড়া অসুস্থ রোগীকে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিতে গেলে সাঁকোর ঐ পার পর্যন্ত ভ্যানে করে নিয়ে যেতে হয়। এ্যাম্বুলেন্স তো পার হতেই পারে না।
বিধান কুমার দাশ, কল্যাণ রায়, আবু তালেবসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, প্রায়দিন এই কাঠের সাঁকোর উপর দিয়ে তাদেরকে মালামাল আনানেয়া করতে হয়। সাঁকোর এপার থেকে ভ্যান আনলোড করে পানের ডালি, ধানের বস্তাসহ বিভিন্ন মালামাল মাথায় করে নিয়ে ওপারে গিয়ে আবার ভ্যানে তুলতে হয়। এতে দুর্ভোগের পাশাপশি বহন খরচ অনেক বেশি হয়।
তালার খেশরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম লিয়াকত হোসেন বলেন, ব্রীজটি না হওয়ায় প্রতিদিন দু’পারের শত শত মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক রাজিব হোসেন রাজু বলেন, এলজিআরডি কর্তৃপক্ষ স্থানটিতে কয়েকবার মাপের কাজ সম্পন্ন করেছে। এছাড়া এখানকার মাটি পরীক্ষা করলেও ব্রীজ নির্মাণের ব্যাপারে তেমন কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
তালা উপজেলা প্রকৌশলী মো: আব্দুল মজিদ মোল্যা বলেন, শালিখা-কাটিপাড়া সড়ক সংলগ্ন ব্রীজটি নির্মাণের জন্য মাটির পরীক্ষার কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুর” হবে সেটা বলা যাচ্ছে না।