ফেসবুকে সম্পাদনা করা নগ্ন ছবি ছড়িয়ে দেয়ায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের নিতাই মন্ডলের মেধাবী কন্যা বিউটি মন্ডল (১৬) ক্ষোভে লজ্জায় নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ ঘটনার পর থেকে গোটা উপজেলার সচেতন মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সর্বস্তরের মানুষ ঘটনার নেপথ্য নায়ক (!) বখাটে মৃত্যুঞ্জয় রায়কে গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে বিউটির আত্মহুতি, সেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গত তিন দিন ধরে ঘটনার তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছে। বিউটি মন্ডলের প্রতি ভালবাসা প্রকাশসহ তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হচ্ছে। এমনকি আর যেন এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য অন্যদের সচেতনতা সৃষ্টিতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিউটি মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে এ ঘটনায় জড়িত মৃত্যুঞ্জয় রায়কে গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বিউটি মন্ডলের অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ দুর্গম কলাগাছি গ্রামে যান এবং বিউটির পিতা-মাতার সাথে কথা বলে সমবেদনা প্রকাশ করেন। একই সাথে তিনি অপরাধিকে শাস্তির আওতায় আনতে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। এ সময় খেশরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রভাষক রাজিব হোসেন রাজুসহ এলাকার শত শত শোকার্ত মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। একদিকে বিউটির চিতার আগুন, অন্যদিকে সংসদ সদস্যকে পেয়ে এলাকার মানুষ শোকে কাতর হয়ে পড়ে।
এদিকে, সন্ধ্যায় কলাগাছি গ্রামের আত্মহত্যার শিকার বিউটি মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা নিতাই মন্ডলের সাথে দেখা করে সমবেদনা প্রকাশ করেন তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইকবাল হোসেন। তিনি ঘটনায় জড়িতদের বিচার হবে বলে আশ্বস্ত করেন এবং জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও তালা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এমএম এনামুল ইসলাম বিকালে বিউটি মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে এহেন দুঃখজনক ঘটনার প্রতিবাদ করেন এবং বখাটের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এদিকে বৃহস্পতিবার তালা প্রেসক্লাবের জরুরী সভায় বিউটি আত্মহননের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বখাটে মৃত্যুঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মেহেদী রাসেল জানান, ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ব্যবস্থা নেয়া হয়। আত্মহত্যার ঘটনাটি দুঃখজনক। তিনি বলেন, বিউটি মন্ডলের আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনার দায়ের মৃত্যুঞ্জয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে জোর অভিযান চালানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে বিউটির মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরা মর্গ থেকে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয় এবং একই দিন দুপুরে বিউটির মরদেহ স্থানীয় শ্মশানে দাহ করা হয়।
তালার সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, মৃত্যুঞ্জয় নামের ছেলেটির কললিষ্ট চেক করা হচ্ছে এবং এ ঘটনায় আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, কলাগাছি গ্রামের জগদীশ রায়ের ছেলে লম্পট মৃত্যুঞ্জয় রায় দীর্ঘদিন ধরে একই গ্রামের নিতাই মন্ডলের মেয়ে স্থানীয় দলুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী বিউটি মন্ডলকে উত্ত্যক্ত করাসহ কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। তাতে মেয়েটি রাজি না হওয়ায় ইন্টারনেট থেকে অন্য মেয়ের নগ্ন ছবি সংগ্রহ করে সেই ছবিটি এডিট করে তাতে বিউটি মন্ডলের মুখের ছবি জুড়ে দেয় মৃত্যুঞ্জয়। আর গত ১ সপ্তাহ আগে এডিট করা ছবিটি নীল নদী বিউটি নামের ফেসবুক আইডির মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় লম্পট মৃত্যুঞ্জয়। এবিষয়ে গত রোববার থানায় অভিযোগ দায়ের করে বিউটির পিতা নিতাই মন্ডল। কিন্তু পুলিশ দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় লজ্জায়, ক্ষোভে, অভিমানে বুধবার দুপুরে নিজ ঘরের মধ্যে গলাই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে বিউটি মন্ডল। বিষয়টি জানার পরপরই লম্পট মৃত্যুঞ্জয়সহ তার পরিবারের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। আত্মহত্যার ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় তালা থানায় মৃত্যুঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনা আইনে মামলা করে হতভাগ্য বিউটি মন্ডলের কাকা দিপঙ্কর মন্ডল।