গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬বছরে যাদেরকে রাজনৈতিক কোনো কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি তারাই এখন তালা উপজেলা বিএনপিসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর সামনের সারির নেতা! মিছিল মিটিংয়ে তাদের সরব উপস্থিতি দেখে অনেক ত্যাগী নেতারা বিস্মিত! আবার দলের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনেকে শঙ্কিত। যারা দুর্দিনে সুবিধাবাদীর ভূমিকা অবলম্বন করেছে ৫ আগস্টের পর তাদের অনেকে নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কেউ কেউ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বর হওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ করছেন। ফলে দিনকে দিন কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা।
সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে বিএনপি দলিয় প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান। ২০০১ সালে ৮ম সংসদ নির্বাচনে আবার হাবিবুল ইসলাম হাবিবের কাছে পরাজিত হন ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান। ২০১৪ সালে ১০ম সংসদ নির্বাচন ও ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৪ দলীয় জোট মনোনীত ওয়ার্কার্স পার্টির এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফিরোজ আহমেদ স্বপন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০১৪ থেকে ২০২৪ দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যপক বিতর্কের সৃষ্টি হলেও বিরোধী মত দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তালা উপজেলার ১২ ইউনিয়ন ও ১০৮টি ওয়ার্ডের বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষকদল, শ্রমিকদলের নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক হামলা মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করা হয়। অসংখ্য নেতাকর্মীদের জেলের ঘানি টানতে হয়েছে। তারপরও জীবন বাজী রেখে ঘর সংসারের কথা চিন্তা না করে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। দলের কাছে তাদের কদর এখন কমে গেছে।
এ ব্যাপারে তালা থানা ছাত্রদলের সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, ৫ আগস্ট বিকাল ৪টার আগমুহূর্ত পর্যন্ত যারা অবসরে ছিলেন, ৪টার পর থেকে তাদের দৌরাত্মে আমরা স্তম্ভিত হয়ে পড়েছি। তাদের দ্বারা সংঘঠিত বিভিন্ন অপকর্মের দায় আমাদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। মূলদল সেটা বুঝতে পারছে কিনা জানি না।
তালা উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব শেখ মোস্তফা হোসেন মন্টু বলেন বিগত ১৬বছর যারা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রীয় ভূমিকা পালন করেছে আজকে তাদেরকে কেন জানি না দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। দলের মধ্যে একধরনের সুবিধাবাদীর উত্থান হয়েছে। যাদেরকে বিগত দিনে আন্দোলনের মাঠে দেখা যায়নি। তাদের দৌরাত্মে আমরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছি।
জেলা কৃষক দলের যুগ্ম-আহবায়ক আলী হোসেন বলেন, এতো নেতা আগে কোথায় ছিল আমরা বুঝতে পারছি না। বিগত ১৬ বছরে এদের তো আমরা দেখতে পাইনি। হামলা মামলা জেল জুলুম নির্যাতন আমরা সহ্য করেছি। আর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসে এখন দেখছি সুবিধাবাদীদের ভিড়। এত ভিড়ের মধ্যে আমাদের হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সরুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. রাশিদুল হক রাজু বলেন, দীর্ঘ সময় রাজনীতি করে যখন সরকারি দলে ছিলাম তখন কোন সুযোগ সুবিধা গ্রহন করেনি। যার কোন প্রমান কেও দেখাতে পারবেনা এবং বিরোধীদলে থেকে জেল জুলুম খেটেছি। দলের নিতী ও নির্দেশ মেনে রাজনীতি করেছি। দলকে ভালবাসি বলে বিএনপির সাথে কখনও বেইমানি করিনি। যতদিন বেঁচে থাকি ততদিন বিএনপির রাজনীতি করে যাবো। কোনো সুবিধাবাদীদের প্রশয় দেবো না।
তালা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সেখ শফিকুল ইসলাম বলেন,বিএনপি বৃহৎ একটি সংগঠন। এখানে ত্যাগী নেতাকর্মীদের সবসময় মূল্যায়ন করা হয়। আর যদি সুবিধা নেওয়ার জন্য কেউ সামনের কাতারে আসতে চায় সে সুযোগ তাদের দেওয়া হবে না। আমরা জানি দলের দুর্দিনে কারা মাঠে কাজ করেছে। কারা জেল জুলুম নির্যাতনের মুখে পড়েছে। আগামীতে তাদেরকে অগ্রাধীকার দেওয়া হবে।
তালা উপজেলা বিএনপিতে সুবিধাবাদীদের আবির্ভাবে কোণঠাসা ত্যাগীরা

Leave a comment