জন্মভূমি ডেস্ক : টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে খুলনার ৯ উপজেলার ১০ হাজার ১৬ টি মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। এতে মৎস্য খাতে ৯৯ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন ডুমুরিয়া উপজেলার চাষিরা।
খুলনা জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিনের অতিবর্ষণে খুলনার ৯ উপজেলার মধ্যে ৭টির ৫০ ইউনিয়নে এক হাজার ৫৪৯টি পুকুর ও খামার, আট হাজার ৪৬৭টি ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ফিন ফিশ (সাদা মাছ) পাঁচ হাজার ৮৪৫ টন, চিংড়ি সাত হাজার ৩৭৩ টন, ২০৫ লাখ পোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে খুলনার মৎস্য খাতের ক্ষতির পরিমাণ ৯৯ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
উপজেলাগুলোর মধ্যে পাইকগাছার ১১ ইউনিয়নে ৯৫০টি খামার ও পুকুর, এক হাজার ৮৫০টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ভেসে গেছে ৮০ টন ফিন ফিশ, ১০৫ টন চিংড়ি মাছ। এ উপজেলায় মৎস্য খাতে আর্থিক ক্ষতি ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কয়রায় সাত ইউনিয়নে ৩৬৪টি পুকুর কুর ও ও খামার, ৯৫৭টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ৩৫ টন ফিন ফিস (সাদা মাছ), ৫২ টন চিংড়ি মাছ। এ উপজেলায় ক্ষতি পাঁচ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
দাকোপে আট ইউনিয়নে ১২০টি পুকুর ও খামার, ৮০০ ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে দুই হাজার টন ফিন ফিশ, দুই হাজার ৫০০ টন চিংড়ি মাছ। এ উপজেলায় আর্থিক ক্ষতি ছয় কোটি ৩০ লাখ টাকা। ডুমুরিয়ায় ১৪ ইউনিয়নে ১০০টি খামার ও পুকুর, তিন হাজার ৭৫০টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে তিন হাজার ৫৬০ টন ফিন ফিশ, চার হাজার ৬৭০ টন চিংড়ি মাছ। ৬২ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
ফুলতলায় ৫৫০টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ৩৫ লাখ টাকার চিংড়ি মাছ। দিঘলিয়ার চার ইউনিয়নে ৫৫০টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ১৬০ টন ফিন ফিশ, ৪৫ টন চিংড়ি মাছ। ক্ষতি ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তেরখাদার ছয় ইউনিয়নে ২৫টি খামার ও পুকুর, ৪০টি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ১০ টন ফিন ফিশ, দেড় টন চিংড়ি মাছ। এতে তিন কোটি ২০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
মৎস্য চাষিরা বলছেন, টানা বর্ষার কারণে হওয়া ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলে, তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন।
খুলনা মহানগরীর আড়ংঘাটা থানার তেলিগাতী গ্রামের ডাকাতিয়া বিলের মাছ চাষি আকবর শেখ বলেন, ঘেরের অনেক সাদা মাছ, গলদা চিংড়ি পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। অনেক টাকা খরচ করেছি। এই ক্ষতি কীভাবে পোষাবো জানি না। গত বছরও আমার অনেক মাছ চলে গেছে। এই বছরও একই অবস্থা। প্রত্যেকটা ঘেরের এমনই অবস্থা। সব ঘের তলিয়ে গেছে। বাকি যেটুকু আছে, ডাঙার পানি বিলে ঢুকলে সেটুকুও আর থাকবে না। বিলের পানি সরানোর কোনও জায়গা নেই। যে একটা জায়গা আছে সেটা কচুরিপানা দিয়ে আটকানো। পানি সরানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। আমরা এখন খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৭ উপজেলার ৫০ ইউনিয়নের এক হাজার ৫৪৯টি পুকুর ও খামার, আট হাজার ৪৬৭টি ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। এতে মৎস্য খাতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাষিরা একদম পথে বসে গেছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে তারা কতটুকু ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন সেই আশঙ্কা জেগেছে। প্রতিটি উপজেলার তথ্য ঢাকা মৎস্য অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের সরকারিভাবে সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে।