জন্মভূমি ডেস্ক : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলে কিছু শাস্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানাভাবে দিয়ে দিয়েছেন। কতজন অনেক বড় জায়গা থেকে নেমে গেছে। শুধু জেলে পুড়লেই শাস্তি, গায়ে আঘাত করলেই শাস্তি? শাস্তি অনেক রকম। এবার নেত্রী যে কৌশল নিয়েছেন, দলের মধ্যেও কেউ ফ্রি স্টাইল করলে শাস্তি কিন্তু পেতেই হবে। তিনি সব নোট করে রাখেন, সময় মতো ব্যবস্থা নেবেন।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মুজিবনগর দিবস উদযাপন উপলক্ষে খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক জেলা শাখাসমূহের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘লন্ডন থেকে যার হুকুমে বিএনপি চলে তার যে ফ্রি স্টাইল নেতৃত্ব, এই নেতৃত্ব এখন বিএনপি নেতাদের নেমে নিতে কষ্ট হচ্ছে। বিএনপি এখন বুঝতে শুরু করেছে যে, তারেক রহমান যতদিন নেতৃত্বে আছে, ততদিন বিএনপি নামক দলটির রাজনীতি ভুলের চোরাবালিতে আটকে থাকবে এবং ভুলের চোরাবালিতে তারা আটকে আছে। এখান থেকে তারা বের হতে পারবে না।’
নির্বাচনবিরোধী কোনো দল এ দেশে রাজনীতি করবে রিমোট কন্ট্রোল নেতৃত্বের অধীনে সেটা কি হয় এমন প্রশ্ন রেখে সেতুমন্ত্রী বলেন, সাহস থাকলে, দেশে আসেন। দেশে এসে রাজনীতি করুন। জেলে যাওয়ার সাহস সঞ্চার করুন। আজকে লন্ডনে বসে আন্দোলনের ডাক দেবেন, সে আন্দোলনে আর কেউ সাড়া দিক, জনগণ দেবে না। এখন বিএনপির নেতাকর্মীরাও বলছে আন্দোলন ভুয়া। এ আন্দোলনকে তারাও ভুয়া আন্দোলন বলছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, এই বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ, রমজানকে ঘিরে রাজনীতি করে ব্যর্থ, ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েও ব্যর্থ। সেটাও কেউ শোনে না।
প্রধানমন্ত্রীর শাস্তিতে দলের অনেকে বড় জায়গা থেকে নেমে গেছে
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দলে কিছু শাস্তি শেখ হাসিনা নানাভাবে দিয়ে দিয়েছেন। কতজন অনেক বড় জায়গা থেকে নেমে গেছে। শুধু জেলে পুড়লেই শাস্তি, গায়ে আঘাত করলেই শাস্তি? শাস্তি অনেক রকম। এবার নেত্রী যে কৌশল নিয়েছেন, দলের মধ্যেও কেউ ফ্রি স্টাইল করলে শাস্তি কিন্তু পেতেই হবে। সব নোট করে রাখেন, সময়মতো ব্যবস্থা নেবেন।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইলেকশন করেছি, স্বতন্ত্রদের ভোট করতে দিয়েছি, এতে কি হয়েছে? নতুন সংসদ বসেছে, নতুন সরকার হয়েছে। অনেক বালা মুসিবতের কথা অনেকে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সব সংকট কাটিয়ে উঠেছি। তারা (বিএনপি) ভেবেছিল ইলেকশন হলেও দুর্ভিক্ষ হবে, সরকার পাঁচদিনও টিকবে না। আবোল তাবোল বলা তাদের রাজনীতি। আমরা সেদিকে মন দেব না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ইলেকশন হয়ে গেছে। সামনে উপজেলা নির্বাচন। আমাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মনোমালিন্য এসব যদি দৃশ্যপটে হাজির করা হয় তাহলে আমাদের চলার পথ কঠিন হয়ে যাবে। নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা কেউ করবেন না। কেউ প্রার্থী হতে চাইলে হবে, বাধা নেই। নৌকা দেওয়া হচ্ছে না কিছু বাস্তব পরিস্থিতির কারণে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি করেনি, তারপরও ৪২.৮ শতাংশ টার্ন আউট। এটা সারা পৃথিবীর স্ট্যান্ডার্ডে সন্তোষজনক।
উপজেলা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা কেউ যেনো না করে সেজন্য সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা কেউ করবেন না। কেউ প্রার্থী হতে চাইলে হবে, বাধা নেই। নৌকা দেওয়া হচ্ছে না কিছু বাস্তব পরিস্থিতির কারণে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে নেতা মানেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, একজনকে নেতা মানি, তিনি প্রমাণ করেছেন, তিনিই সঠিক ক্রাইসিস ম্যানেজার। তাকে হাল ধরতে দিন। তার পেছনে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। দেশের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৮ ভাগের স্বপ্ন দেখলেও সাড়ে পাঁচ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। কিন্তু সংকটে আমরা পড়ব না। জিনিসপত্রের দাম কমা শুরু হয়েছে। পেঁয়াজের সংকটও কেটে গেছে। জ্বালানি তেলের দামও সমন্বয়ের মাধ্যমে কিছুটা কমানো হয়েছে। আস্তে আস্তে হবে, অপেক্ষা করতে হবে।
সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, সবাই দায়িত্বশীল কথা বলবেন। অনেককে দেখি ফেসবুক লাইভে এসে বলতে থাকেন যার যা খুশি। এগুলো ঠিক নয়। দল করলে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। ফ্রি স্টাইল কোনো কথা বলবে, আর দলকে সেগুলোর দায়িত্ব নিতে হবে এটা ঠিক নয়। আপনারা আসল শত্রুকে চিনুন। আসল শত্রু হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাম্প্রদায়িক শক্তি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের অর্থনীতির সংকট একেবারে কেটে গেছে একথা বলা যেমন ঠিক নয়, তেমনি অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থা যারা বলেন সেটাও ঠিক নয়। আজকে আফ্রিকান দেশগুলোতে অস্থিরতা, লোহিত সাগরে দ্বন্দ্ব। এসব আছে, সংকটও আছে। আজকে পৃথিবী একটা গ্লোবাল ভিলেজ, কোথাও সংকট হলে তার রেশ অন্যদেশে এসে পড়ে। আমাদের জ্বালানি, প্রাইস অফ এসেনসিয়াল, ডলার সংকট এসবই আন্তর্জাতিকভাবে সম্পর্কিত।
১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার দিবসে মুজিবনগরে মূল অনুষ্ঠান হবে বলে জানান সেতুমন্ত্রী। বলেন, মূল অনুষ্ঠান হবে মুজিবনগরে। আজকে অন্য কিছু নয় আমরা মুজিবনগর দিবস কীভাবে স্বার্থক করব ও পালন করব সেটা নিয়ে আলোচনা করব।
দিবসটি এই দেশের তেমন আর কেউ পালন করে না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দিবসটি উপলক্ষে বিএনপিসহ বড় বড় দলগুলো কারও অনুষ্ঠানমালা আছে এমনটা জানা নেই। আমরা পালন করব। কারণ এটি আমাদের জন্মের চেতনা। এই চেতনা আওয়ামী লীগকে ধারণ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।